জুমবাংলা ডেস্ক : আমন মৌসুমের একটি ধানের নাম তুলসীমালা। স্থানীয়ভাবে এই ধানকে ‘জামাই আদুরি, জামাই মুখের ধান’ বলা হয়। এই ধানের চাল দেখতে যেমন ছোট ও মিহি, এর রয়েছে তেমনি বাহারি সুগন্ধ। একে জামাই আদুরি বলে ডাকার কারণ হলো; বাড়িতে নতুন জামাই এলে শ্বশুরবাড়িতে অবধারিতভাবে রান্না হবে তুলসীমালার পোলাও, খিচুড়ি, পায়েস কিংবা পিঠা। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব, পার্বণ ও অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে এই চালের ব্যবহার ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। জানা গেছে, এক সময় উপজেলাজুড়ে কালো জিরা, চিনিগুঁড়া ও তুলসীমালাসহ বেশকিছু জাতের চিকন চালের ধান ব্যাপক আকারে চাষ হতো।
এখন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন হওয়ার পর চিকন ধানের চাষ কিছুটা কমে গেলেও জামাই আপ্যায়ন ও অতিথি আপ্যায়নে এই ধানের চালের বেশ কদর রয়েছে। তাই সীমিত আকারে কৃষকরা তুলসীমালা ধান চাষ করেন। আগে বিত্তবান পরিবারগুলো এই চাল ব্যবহার করত। বর্তমানে দরিদ্র শ্রেণির মানুষজনও জামাই আপ্যায়নে ও পারিবারিক অনুষ্ঠানাদিতে তুলসীমালা চাল নিত্যদিন ব্যবহার করে। দূরের কিংবা কাছের আত্মীয়দের এই চাল উপহার হিসেবে পাঠায়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই ধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ফুল আসার পর থেকে পাকা পর্যন্ত ৫ বার রং পাল্টায়। প্রথমে হালকা সবুজাভ, এর পর কিছুটা অ্যাশ, এর পর হালকা জাম রং, এর পর গাঢ় জাম রং এবং শেষে কালো ও অ্যাশ মিলিয়ে নতুন একটি রং ধারণ করে।
পালাহার গ্রামের গৃহবধূ রিতু আক্তার ও ঘোষপাড়া গ্রামের পপি আক্তার বলেন, বাড়িতে জামাই এলে এই চাল ছাড়া আপ্যায়ন কল্পনাও করা যায় না। পোলাও ভাত, বিরিয়ানি ও পায়েস রান্নায় তুলসীমালা চাল ব্যবহার করতে হয়। এই চালের পিঠা, পায়েস, খই-মুড়ি, ভাতের সুগন্ধ ও স্বাদ অসাধারণ। কৃষক রমজান আলী, রুকন মিয়া ও শহিদুল আলম বলেন, এই চাল যেহেতু জামাই আপ্যায়নে ব্যবহৃত হয় তাই আমরা জামাই আদুরি ও জামাই মুখের ধান বলেও জানি। এক সময় পারিবারিক প্রয়োজনে সীমিত আকারে তুলসীমালা ধান চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার চিন্তা করছি। প্রবীণ কৃষক শাহেদ আলী বললেন, ‘বাপ-দাদার কাছ থেকে আমরা এই ধানের বীজ পেয়েছি। এখন উপজেলার সব কৃষকই জামাই আদুরির বীজ সংরক্ষণ করে রাখেন।’
নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার আনিসুজ্জামান বলেন, এই ধানের বাজারমূল্য ভালো পাওয়া যায়। এই উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ছেয়ে বেশি। আমন মৌসুমে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসে এই জাতের ধান আবাদ করা হয়। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই চাল বাজারে আসে। উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন এই চাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ। সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।