জুমবাংলা ডেস্ক : জামাই-শ্বশুর অঙ্গীকার করলেন আর কখনো বিবাদ করবেন না। হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে এমন অঙ্গীকারের পর দুজনে কোলাকুলিও করলেন। আদালত দুজনের উদ্দ্যেশে বললেন, গ্রামের লোকের কুপরামর্শ কারণে তুলবেন না। একবার কি ভেবে দেখছেন? কী নিয়ে আপনারা বিবাদ করছেন? আপনাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎের কথা চিন্তা করে এই বিবাদ থেকে সরে আসতে হবে। নইলে মানুষ বলবে, এরা তো গরু-মহিষ নিয়ে বিবাদ করে। মামলা করে।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (২৮ জুন) এই মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে জামাই-শ্বশুরকে মিলেমিশে থাকা ও একে অপরের দেখভাল করার নির্দেশ দেন।
শ্বশুরের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেন, আপনার দায়িত্ব অনেক। মেয়ের জামাইকে দেখে রাখবেন। জামাইয়ের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আপনিও শ্বশুরের খোঁজ রাখবেন। শ্রদ্ধা করবেন।
এরপরই হাইকোর্ট শ্বশুরের করা আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দেয়। আদালত বলেন, শুধু গরু-মহিষই নয়, ভবিষ্যতে কোনো বিষয় নিয়েই বিবাদে যাবেন না। দুজনেই হাসিমুখে থাকবেন। আপনাদের মধ্যে যেন বিবাদ আর না হয় সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে সংশ্লিষ্ট রামগতি থানার ওসিকে নির্দেশনা দিচ্ছি।
এক দশক আগে লক্ষীপুরের রামগতির আবদুল অদুদ যান বিদেশে। সেখানে যাওয়ার আগে তার কেনা মহিষ ও গরু লালন পালনের জন্য দিয়েছিলেন শ্বশুড়কে। লালন পালনের পর গবাদি পশুগুলো সংখ্যায় বেড়েছে। এক দশক পর বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন অদুদ। ফেরত চান তার গবাদি পশুগুলো। কিন্তু সেগুলো দিতে অস্বীকৃতি জানান শ্বশুর নূর মোহাম্মদ। তদন্তের পর দায়রা আদালতের সিদ্ধান্ত যায় জামাই অদুদের পক্ষে। সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন শ্বশুড়। মামলার বিষয়বস্তু শোনার পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ সালিশের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসকে। গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে চলা সালিশ বৈঠকের পরই বিরোধ নিষ্পত্তি হয় জামাই-শ্বশুড়ের। সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৭টি মহিষের মধ্যে ৫টি বড় ও ৪টি ছোট মহিষ পাবে অদুদ। আর ৬টি বড় ও ২টি ছোট মহিষ নেবে শ্বশুর। বিরোধ নিষ্পত্তির এই সিদ্ধান্ত আজ মঙ্গলবার অবহিত করা হয় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে। ব্যতিক্রমধর্মী এ মামলা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আলোচনার খোরাক যোগায়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, চাকরির উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যান অদুদ। তার স্ত্রী ও চার সন্তান রয়েছে। বিদেশ যাওয়ার আগে স্বামীর কেনা ৮টি মহিষ ও ৫টি গরু লালন-পালনের জন্য কহিনুর বেগম তার বাবা নূর মোহাম্মদকে দেন। ৫টি গরু ও ৮টি মহিষ বাছুরসহ ৭টি গরু ও ২০টি মহিষে পরিণত হয়। ১১ বছর চাকরির পর ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন অদুদ। দেশে আসার পর গবাদি পশুগুলো ফেরত চাইলে নূর মোহাম্মদ ফেরত না দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর সেগুলো উদ্ধারের জন্য লক্ষীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা করেন তিনি।
মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দেয় রামগতি থানা পুলিশ। একইসঙ্গে গবাদি পশুগুলোও উদ্ধার করে জিম্মায় নেয় পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গরু ও মহিষ নিজের দাবি করে আদালতে আবেদন করেন নূর মোহাম্মদ। এরপর প্রকৃত মালিকানা যাচাইয়ের জন্য আদালতের আদেশে চরকলাকোপা কারামতিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর গবাদি পশুগুলো জামাই অদুদের জিম্মায় দিতে আদেশ দেয় আদালত। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আবেদন করেন শ্বশুড়। লক্ষীপুরের দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল রাখেন।
এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন শ্বশুর। এরপরই হাইকোর্ট বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসকে নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশের পর গত বৃহস্পতিবার বেলা ২ টা থেকে বিবাদমান দুই পক্ষ ও তাদের আইনজীবীদের নিয়ে সালিশে বসে লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ ফারাহ মামুন ও সমন্বয়কারী রিপন পৌল স্কু। বৈঠকে দুই পক্ষই তাদের মতামত তুলে ধরেন।
অতিরিক্ত জেলা জজ ফারাহ মামুন বলেন, পরিবারের মধ্যে এর চেয়েও জটিল বিষয় নিয়ে মামলা মোকদ্দমা হয়। কিন্তু মামলা মোকদ্দমা কারো জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনে না। শুধুই বিরোধই জিইয়ে রাখে না, অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ করে। আমরা চাই আপনারা মামলা মোকদ্দমা থেকে বেরিয়ে এসে বিরোধ মীমাংসা করে ফেলূন। এরপরই উভয় পক্ষ থেকে দেওয়া নানা প্রস্তাব যোজন-বিয়োজনের পর মীমাংসায় উপনীত হয় দুই পক্ষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।