জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগ পর নতুন মোড় নিয়েছে একটি ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে। জামায়াতে ইসলামীর দলীয় নিবন্ধন বাতিলের হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ বাতিল করে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমের আইনগত সংকট কাটানোর পথ খুলে গেল। এই রায়ের প্রেক্ষাপটে জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার দাবি তাদের দলগত অধিকার হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে দলটি।
Table of Contents
জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার রায় ও এর তাৎপর্য
২ জুন ২০২৫ তারিখে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণ করে জামায়াতের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল। এই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার বিষয়টি জামায়াতের দলগত অধিকার। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের পূর্বের রায় ন্যায়সংগত হয়নি বলে আপিল বিভাগ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই রায়ের ফলে ২০১৩ সালের আগে জামায়াতের যে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অবস্থান ছিল, তা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিশেষ করে নির্বাচনে ব্যবহৃত দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাওয়ার দাবিও দলটি করেছে, যা তাদের পূর্বের সাংসদদের পরিচিত প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
আইনগত পটভূমি ও নির্বাচন কমিশনের করণীয়
২০১৩ সালের হাইকোর্টের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছিল, যা দলটির রাজনৈতিক উপস্থিতি সীমিত করেছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের জুন মাসে আপিল বিভাগ সেই রায় বাতিল করে দেয়। আদালতের মতে, হাইকোর্টের রুল অ্যাবসলিউট করা ন্যায়সংগত হয়নি এবং সেই রায় ও আদেশ বাতিলযোগ্য।
এই রায়ের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে, জামায়াতের গঠনতন্ত্র, রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য বিষয় যদি এখনো বিচারাধীন থাকে, তাহলে তা সাংবিধানিকভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে বিস্তারিত নীতিমালা পাওয়া যাবে।
এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতের অনুরোধের বিষয়ে কমিশন ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে দাবি করেছেন হামিদুর রহমান।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
জামায়াতের এই আইনি বিজয় দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। দলটি বলছে, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার’ তাদের নিবন্ধন অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছিল। এখন আদালতের রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। এই প্রেক্ষাপটে দলের নেতারা নির্বাচন কমিশনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছেন।
প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসাইন, জসিম উদ্দিন সরকার ও শিশির মনির। তাঁরা বৈঠকে দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক পুনঃপ্রাপ্তির প্রয়োজনীয়তা ও সাংবিধানিক যুক্তি তুলে ধরেন।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিবেচনা
- নিবন্ধনের ফলে দলটি আবার সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবে
- সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকা গুরুত্বপূর্ণ
- এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বার্তা দেওয়া হয়েছে
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও মিডিয়ার ভূমিকা
মিডিয়া এ বিষয়ে বিশ্লেষণ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, আদালতের রায় প্রমাণ করে দেশে এখনো বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তবে রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ এই রায়কে স্বাগত জানালেও কেউ আবার এই রায়ের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
FAQs
- জামায়াতের নিবন্ধন কেন আগে বাতিল হয়েছিল? ২০১৩ সালে হাইকোর্ট তাদের গঠনতন্ত্রের সাংবিধানিক অসঙ্গতির কারণে নিবন্ধন বাতিল করেছিল।
- বর্তমানে জামায়াতের নিবন্ধনের অবস্থা কী? আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করায় নিবন্ধনের পথ খুলেছে।
- জামায়াত আবার কী প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে? দলটি দাবি করছে তারা পূর্বের ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ব্যবহার করবে।
- ইসি কি জামায়াতের দাবি মেনে নিয়েছে? প্রতিনিধিদলের দাবি অনুযায়ী, ইসি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
- এই রায়ের রাজনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে? এটি রাজনৈতিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে এবং আদালতের স্বাধীনতা প্রতিফলিত করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।