রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সাত দফা দাবিতে এ সমাবেশ করে দলটি।
দাবিগুলো হলো: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সব গণহত্যার বিচার; রাষ্ট্রের সকল স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার; ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন; জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন; জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন; প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা।
সমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সারা দেশে চালানো হয় ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রচার-প্রচারণা। বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় সমাবেশের প্রথম পর্ব। পরবর্তী সময়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি উদ্যানে প্রবেশ করলে রাস্তার দু-পাশে অবস্থান নেয়া দলীয় নেতাকর্মীরা স্লোগানের মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান।
এরপর ২টা ৪ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। একে একে বক্তৃতা করেন দলটির নেতা ও আমন্ত্রিত অন্যান্য দলের নেতারা।
সারজিস আলম
৭২-এর মুজিববাদী সংবিধানকে একপাশে রেখে কোনোদিন বাংলাদেশপন্থি বাংলাদেশ সম্ভব নয় দাবি করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘এক জুলাই পেরিয়ে আমরা আরেক জুলাইয়ে উপনীত হয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে মুজিববাদীদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। গোপালগঞ্জে এখনও তারা আস্তানা গেড়ে বসে আছে। তারা এখনও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয়। এ মুজিববাদ একটি আদর্শ-শুধু আইনিভাবে এদের মোকাবিলা করা যাবে না। আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংস্কৃতিকভাবেও এদের মোকাবিলা করতে হবে।’
আবরার ফাহাদের বাবা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যার বিচার ছয় বছরেও না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আমার ছেলেকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। তার একমাত্র অপরাধ ছিল–সে দেশের পক্ষে কথা বলেছিল। ভারতীয় আধিপত্য, আগ্রাসন এবং তৎকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের কিছু অবৈধ চুক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল।’
নুরুল হক নুর
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণ-অধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, রক্তের বিনিময়ে যে ঐতিহাসিক পরিবর্তন পেয়েছি–এই পরিবর্তনকে টেকসই করার জন্য বাংলাদেশের মানুষ যে শাসনতান্ত্রিক এবং পরিবর্তনের আওয়াজ উঠিয়েছে; সেই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন না করে আপনারা নির্বাচনের দিকে হাঁটবেন না।
শিবির সভাপতি
স্বাধীনতা, ইসলামি মূল্যবোধ ও জাতিসত্তার ইতিহাস ধারণ করে নতুন একটি আদর্শিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোকে গত ১৫ বছর সন্ত্রাস ও মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছে। এবার নতুন বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ ও দেশবাসী নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এতগুলো সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে, কিন্তু শিক্ষা সংস্কারের কমিশন গঠন করা হয়নি। অথচ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষার মধ্যদিয়ে একটি জাতি অগ্রসর হয়। কিন্তু ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া দাসত্বমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে দিন দিন গ্লানি টানতে হচ্ছে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশে সুশাসনের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লায় চেয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে মজলুম সংগঠন জামায়াত। আর দলগুলোর মধ্যে আমরাই সম্ভবত বেশিরভাগ শহীদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি আল্লাহর রহমতে। আমরা একটি সুশাসনের রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই।’
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের
পিআর পদ্ধতিতে কেন্দ্র দখল বা টাকা দিয়ে ভোট কেনা যাবে না বলে অনেকে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চান না মন্তব্য করে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জুলাইয়ের লড়াই-সংগ্রামের নতুন লক্ষ্য হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ। ৫৪ বছরের শাসনের যে বাংলাদেশ, ৫ আগস্ট ছিল সেই বাংলাদেশের যে পরিচালনা, যে নেতৃত্ব–তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানের বিপ্লব। আমরা নতুন বাংলাদেশ চাই। যারা আবার পুরোনো কায়দায় এই দেশে পুরোনো শাসন ফিরিয়ে আনতে চায়, জনগণ তাদের সেই সুযোগ দেবে না।’
ডা. শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামী দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পেলে মালিক না হয়ে সেবক হবে বলে জানিয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আজ আমি লক্ষ্য জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ঘোষণা দিচ্ছি, আগামী দিনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে কোনো এমপি-মন্ত্রী সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না। কোনো এমপি-মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন গাড়িতে চড়বে না। নিজের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না। কোনো এমপি-মন্ত্রী যদি সরকারি বরাদ্দ পান, তাহলে কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেদন দিতে বাধ্য হবেন। এছাড়া চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। আমরা চাঁদা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমর সহ্য করব না। এমন বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই।’
উল্লেখ্য, ড. শফিকুর রহমান ভাষণ দেয়ার সময় অজ্ঞান হয়ে মঞ্চে পড়ে যান। পরে চেয়ারে বসে তিনি পুনরায় বক্তৃতা চালিয়ে যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।