জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতারণার ৩৩টি মামলায় প্রায় আট মাস কারাবন্দি থাকার পর জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে ইভ্যালিকে ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ গ্রাহকদের কাছে আরও কিছুদিন সময় চাইলেন আলোচিত ই কমার্স প্ল্যাটফর্মটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন।
গত বুধবার গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে মুক্তির পর ইভ্যালিফ্যানস ক্লাব ব্যানারে একটি গ্রুপের আমন্ত্রণে ভার্চুয়াল আলোচনায় যুক্ত হন শামীমা; জেলে যাওয়ার আগে তাকে কখনও এধরনের সরাসরি আলাপে দেখা যায়নি।
গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার যে ৩৩টি মামলা শামীমার বিরুদ্ধে রয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাদীর সঙ্গে আপোষের ভিত্তিতে জামিন পেয়েছেন বলে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান।
আলোচনার ইউটিউব ভিডিও ইভ্যালিফ্যানস ক্লাবের ওয়েবসাইটে শুক্রবার মধ্যরাতে প্রকাশ করা হয়।
ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের সমর্থনে ইভ্যালিফ্যানস ডটক্লাব নামে এ ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়।
দ্রুত রাসেলকে মুক্ত করার চেষ্টার কথা জানিয়ে শামীমা বলেন, “আবার নতুন করে ইভ্যালিকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে। আবারও সবকিছু নতুন করে শুরু করব। হয়তো অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। তার মানে এই নয় যে, আমরা হেরে গিয়েছি। আমাদের আবার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিটা আছে।
“বর্তমানে ইভ্যালির পরিস্থিতি বর্ণনা করার অধিকারটুকু আমার নেই। হাইকোর্ট থেকে একটি বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই বোর্ডের সাথেও আমরা বসব। তাদের সাথেও আমরা কথা বলব ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে। তখন হয়তো আমরা বুঝতে পারব যে, পণ্য নিয়ে, কিংবা গেটওয়ে নিয়ে কী করতে যাচ্ছি। কিংবা কারও মামলা নিয়ে হোক।”
বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পণ্য না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে দেরি করার কারণেই সমালোচিত হতে শুরু করেছিল ইভ্যালি।
এক মাসের মধ্যে পণ্য দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক গ্রাহক, সরবরাহকারী (সাপ্লাইয়ার), মার্চেন্ট পণ্য বা অর্থ বুঝে পেতে অপেক্ষা করছিলেন বছরের পর বছর। অপেক্ষাকৃত পুরোনো গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৫০ শতাংশ ছাড়ে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে নতুন গ্রাহককে আকৃষ্ট করার কৌশল ছিল ইভ্যালির।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রাহকের করা প্রতারণা মামলায় রাসেল-শামীমা গ্রেপ্তার হন। অনিরীক্ষিত হিসাবে তখন ইভ্যালির কাছে প্রতারিত গ্রাহকের পাওনা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এর বাইরে মার্চেন্ট ও সাপ্লাইয়ারদের পাওনা মিলিয়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার দায়ে পড়ে যায় কোম্পানিটি।
এমন পরিস্থিতিতে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে চেয়ারম্যান করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় হাইকোর্ট। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজকে করা হয় পর্ষদের সদস্য। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনকে ওই পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয়।
এসব প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে শামীমা বলেন, “আপনারা জানেন ইভ্যালি বিষয় এখন আর নরমাল পর্যায়ে নেই। এটা নিয়ে হাই কোর্ট থেকে কিছু নির্দেশনা আছে, মন্ত্রণালয়ের কিছু নির্দেশনা আছে। সেই সব নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ভবিষ্যত পরিকল্পনা করব।“
ওই ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি বলেন, “যেহেতু জেল থেকে বের হয়েছি, কিভাবে সবকিছু আবার নতুনভাবে শুরু করা যায় সেটার চেষ্টা করব। যেন কেউ কোনোভাবে কোনো দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। আপনারা যারা আমাদের পাশে ছিলেন, সময় দিয়েছেন, সুযোগ দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
“আরও কিছুটা সময় আমাদের সাথে থাকবেন। আরও কিছুটা সময় আমাদের দেবেন, যেন আমরা সবকিছু গুছিয়ে তুলতে পারি। হাই কোর্টের যেহেতু কিছু নির্দেশনা আছে, এখনই আমি সবকিছু নিয়ে হয়তো কথা বলতে পারব না। তারপরেও হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে কীভাবে কতটুকু কী করা হয় তা নিয়ে ভবিষ্যতে আমরা কথা বলব।“ ভার্চুয়াল ওই আলোচনায় আগামীতে সংবাদ সম্মেলনে আসার কথাও বলেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।