কোনো মুসলিম ব্যক্তি মারা গেলে তার ক্ষমা প্রার্থনার জন্য মরদেহ সামনে রেখে যে বিশেষ নিয়মে দোয়া করা হয় সেটিকেই মূলত জানাজার নামাজ বলা হয়। জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ, কয়েকজন মিলে জানাজার নামাজ আদায় করলে তা সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। তবে কেউই যদি আদায় না করে, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে।

জানাজায় অংশ নেয়া মৃত মুসলিমের অধিকার। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক ছয়টি। (১) তার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম করবে, (২) তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি গ্রহণ করবে, (৩) সে তোমার কাছে সৎ পরামর্শ চাইলে, তুমি তাকে সৎ পরামর্শ দেবে, (৪) সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে, তার জন্য তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) রহমতের দোয়া করবে, (৫) সে অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে এবং (৬) সে মারা গেলে তার (জানাজা) সঙ্গে যাবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৪৬৬)
এ ক্ষেত্রে কারও জানাজায় অংশ নেয়ার বিশেষ সওয়াবও রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় কোনো মুসলিমের জানাজায় অনুগমন করে এবং তার জানাজা আদায় ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সঙ্গে থাকে, সে দুই কিরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কিরাত হলো উহুদ পর্বতের মতো। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাজা আদায় করে এবং দাফন সম্পন্ন হওয়ার আগেই চলে আসে, সে ব্যক্তি এক কিরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৫)
অন্যদিকে মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফন শেষে দোয়া করার কথাও হাদিসে এসেছে। উসমান ইবনু আফফান (রা.) সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফন শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেন- তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সে যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে সেজন্য দোয়া করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩২২১)
জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া
জানাজার নামাজের মূল ভিত্তি হলো নিয়ত। ইসলামের সব ইবাদতের মতো এই নামাজও নিয়ত ছাড়া পূর্ণতা পায় না। হযরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘প্রত্যেক কাজ নিয়তের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৮২১)
এ ক্ষেত্রে জানাজার নামাজের ক্ষেত্রে শুধু মনে এই সিদ্ধান্ত থাকলেই যথেষ্ট যে, ‘আমি এই ইমামের পেছনে জানাজার নামাজ আদায় করছি।’ এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো আরবি বাক্য বা মুখস্থ করা শব্দমালা উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়। এমনকি জানাজার লাশটি পুরুষ না নারী, শিশু না প্রাপ্তবয়স্ক- তা নির্দিষ্টভাবে জানা না থাকলেও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যায়। তবে আলেমদের মতে, ইমাম বা জানাজার দায়িত্বশীলদের উচিত নামাজ শুরুর আগে মরদেহের পরিচয় স্পষ্ট করে বলা, যাতে মুসল্লিরা তৃতীয় তাকবিরের পর প্রযোজ্য দোয়া সঠিকভাবে পড়তে পারেন।
আর জানাজার নামাজ মূলত চার তাকবিরের সঙ্গে আদায় করতে হয়। এরমধ্যে প্রথম তাকবির বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত ওঠাতে হয়। এরপর নাভির নিচে হাত বেঁধে সানা পড়তে হবে। তবে সানার মধ্যে ‘ওয়া তাআলা জাদ্দুকা’-এর পর ‘ওয়া জাল্লা সানাউকা’ পড়তে হয়। এরপর তাকবির বলে দরুদে ইবরাহিম পড়তে হয়। তারপর তাকবির বলে নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়। সবশেষ চতুর্থ তাকবির বলে ডানে-বাঁয়ে সালাম ফেরাতে হয়।
তবে জানাজায় মৃতের জন্য যে দোয়া পড়া হয়, সে ক্ষেত্রে শিশু ও বয়স্ক বিবেচনায় দোয়ার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। মৃত ব্যক্তি যদি প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ হয় তবে নিচের দোয়াটি পড়তে হয়-
আরবি:
للَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهُ
বাংলা: আল্লাহুম্মাগফির লি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়েবিনা ওয়া সগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনছানা, আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়া আলা তুদিল্লানা বা-দাহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত এবং মৃতদের, উপস্থিত এবং গায়েবদের, ছোট ও বড়দের এবং আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন, তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন। যাকে মৃত্যু দান করবেন, তাকে ইমানের সঙ্গেই মৃত্যু দিন। হে আল্লাহ! এর সওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং এরপর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩২০১; সুনান আত তিরমিজি, হাদিস: ১০২৪)
অন্যদিকে মৃত ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে নিচের দোয়াটি পড়তে হয়-
আরবি: اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهُ لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا شَفِيْعًا وَّمُشَفَّعًا
বাংলা: আল্লাহুম্মাজআলহু লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহু লানা শা-ফিআও ওয়া মুশাফ্ফাআ।
অর্থ: হে আল্লাহ! এ শিশুকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।
তবে মৃত শিশু যদি মেয়ে হয় তবে নিচের দোয়াটি পড়তে হয়-
আরবি: اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا شَفِيْعَةً وَّمُشَفَّعَة
বাংলা: আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শা-ফিআতাঁও ওয়া মুশাফ্ফাআহ।
লোক প্রশাসন অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে পক্ষপাতের অভিযোগ, গঠনতন্ত্র জানেন না কমিশনার
অর্থ: হে আল্লাহ! এই বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


