জুমবাংলা ডেস্ক : রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সদ্য অনুমোদিত পদোন্নতি নীতিমালা ঘিরে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন নীতিমালাটি একতরফা এবং বৈষম্যমূলক। যেখানে দক্ষতা ও নৈতিকতার পরিবর্তে গুরুত্ব পেয়েছে শুধু জ্যেষ্ঠতা এবং অতীতের বিতর্কিত নিয়োগ।
সম্প্রতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নীতিমালাটি অনুমোদনের পরই এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ব্যাংকের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ ছাড়া, ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছে কর্মীরা।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সিনিয়র অফিসার (নবম গ্রেড) পদে মেধাভিত্তিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি এবং পূর্বে দশম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়া একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে সূক্ষ্ম কারচুপি করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালায় কিছু অপ্রচলিত মূল্যায়ন সূচক যুক্ত করা হয়েছে, যা দেশের ব্যাংক খাতে আগে কখনো ব্যবহৃত হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে— ম্যানেজেরিয়াল অভিজ্ঞতা, দুর্গম এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা কিংবা নিজ পদে চাকরিকালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র চাকরিতে যোগদানের তারিখকে চাকরিকালের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে।
ফলে ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে নবম গ্রেডে ‘সিনিয়র অফিসার’ হিসেবে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা প্রমোশনের দৌড়ে পেছনে পড়ে যাচ্ছেন, যেখানে পরবর্তীতে দশম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়া কেউ প্রমোশন পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এতে মেধার পরিবর্তে সময়ের ভিত্তিতে প্রমোশন নিশ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে নবম ও দশম গ্রেডের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য থাকলেও প্রস্তাবিত নীতিমালায় এমনভাবে নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে যে, সিনিয়র অফিসার হওয়ার পরও কেউ পদোন্নতির দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এক চিঠিতে বলা হয়েছে, চাকরির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী প্রতি বছর ০.২৮ নম্বর হারে ২৫ বছরে সর্বোচ্চ ৭ নম্বর বরাদ্দ হবে। ফলে ‘অফিসার’ হিসেবে আগে যোগ দেওয়া কেউ ৩.৬৪ নম্বর পেয়ে নবম গ্রেডে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার ১.৪০ নম্বরকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন। এতে প্রায় তিন হাজার সিনিয়র অফিসার তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত নীতিমালাটি আবুল বারকাতের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সুবিধা দিতেই তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারকাতের সময়ে জনতা ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়ম ও দলীয়করণ হয়েছিল। সেই সময় নিয়োগ পাওয়া একাংশই বর্তমানে প্রমোশনের মূল সুবিধাভোগী হয়ে উঠছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে জনতা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং দক্ষতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একদিকে শ্রেণিকৃত ঋণ ও মূলধন ঘাটতির চাপ, অন্যদিকে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ— সবমিলিয়ে ব্যাংকের চলমান অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
অতীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হলে জনতা ব্যাংকে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু নতুন প্রমোশন নীতিমালা আবার সেই পুরোনো অনিয়ম ও বিতর্কিত পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার আশঙ্কা তৈরি করছে।
সিনিয়র অফিসার হিসেবে ২০১৯ সাল ও পরবর্তী সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এক চিঠিতে লিখেছেন, ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশে খাদের কিনারা থেকে জনতা ব্যাংকের গৌরব ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। কিন্তু নতুন নীতিমালা আমাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মজিবুর রহমান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে একটি খসড়া নীতিমালা করা হয়েছে। এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকার যেভাবে সমন্বিত নীতিমালা করছে, সেটি ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু আমরা ২০২৪ সালের পদোন্নতির জন্য এ নীতিমালা করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।