জুমবাংলা ডেস্ক : বেক্সিমকো গ্রুপের কর্মীদের তিন মাসের বেতনের সমপরিমাণ নতুন ঋণ দিতে অনাপত্তি পেল রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক। সরকারের বিশেষ পরামর্শে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ অনাপত্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের ‘বি ক্যাটেগরির’ কোম্পানির স্বত্ব বিক্রির জন্য একটি তালিকা করা হয়েছে। জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের বর্তমানে মোট ঋণ রয়েছে ২৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। এরই মধ্যে যা খেলাপি হয়ে গেছে। বিপুল অঙ্কের এ ঋণ একক গ্রাহকের ঋণসীমার কয়েক গুণ বেশি। যে কারণে অনাপত্তি নিতে হয়েছে। জানা গেছে, নতুন ঋণের পরিমাণ হবে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ, স্বরাষ্ট্র, শিল্প এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত কমিটির সদস্য। গত ২৮ নভেম্বর কমিটির প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের আওতাধীন ইউনিটের শ্রমিকদের আগামী তিন মাসের বেতন পরিশোধে প্রয়োজনীয় ঋণ দেবে জনতা ব্যাংক। তবে বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ঋণখেলাপি। আবার এরই মধ্যে যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে, তা নির্ধারিত সীমার ১৬ গুণের বেশি।
জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বলেন, সব ধরনের কমপ্লায়েন্স মেনে বেক্সিমকো গ্রুপকে নতুন ঋণ দেওয়া হবে। সরকারের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এখনও অনাপত্তির চিঠি হাতে পাননি।
জানা গেছে, জনতা ব্যাংক সার্বিক পরিস্থিতি তুলে গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বরাবর বেক্সিমকো গ্রুপের নতুন ঋণের বিষয়ে অনাপত্তি চেয়ে আবেদন করে। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে গত বৃহস্পতিবার অনাপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবেদনে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৭কক ধারা অনুযায়ী কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে নতুন ঋণ দিতে পারে না ব্যাংক। একই আইনের ২৬খ ধারা অনুযায়ী ব্যাংকের রক্ষিত ও পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ দেওয়া যায়। এরই মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের অনুকূলে বিতরণ করা ঋণ রয়েছে ২৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। ব্যাংকের মোট মূলধনের যা ৪১০ শতাংশ। এরই মধ্যে এসব ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে বেক্সিমকো গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই।
অনাপত্তি চেয়ে করা আবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের ৬০ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বা ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। আর মূলধন ঘাটতি ঠেকেছে ৩৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রথমবারের মতো পরিচালন মুনাফার পরিবর্তে লোকসানে পড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ত্রৈমাসিকে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। বছর শেষে যা দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। দৈনন্দিন ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এখন ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করে চলতে হচ্ছে। যে কারণে পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ব্যাংক রেট তথা ৪ শতাংশ সুদে বিশেষ ধার চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুনর্মূলধনীকরণের জন্য সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারার আওতায় সরকারের পরামর্শে যে কোনো ছাড় দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী বিশেষ এই অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে এর আগেই দুই মাসের বেতন সহায়তা দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এখন আরও তিন মাসের সহায়তা দেওয়া হবে। সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।