জাতীয় পার্টিকে দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসলেও এবার জাপার তিন নেতাকে মনোনয়ন দিলো জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে রাজনৈতিক দলেরা নেতারা।

তারা বলছেন, যে দলটির নেতারা জুলাই অভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং পতিত স্বৈরশাসকের দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে শুরু থেকেই সোচ্চার সে দলটিই দোসরদের মনোনয়ন দিয়ে রাজনীতিতে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার যে চেষ্টা করছেন তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।
এবিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। গণআন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলটির কাছে জনগণ এগুলো আশা করেনি। আমি বিশ্বাস করি এনসিপি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। আর যদি না করে তাহলে জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়ে জনগণের ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হবে এবং মানুষ তাদের বিশ্বাসঘাতক বলবে। মনে রাখতে হবে আবার যদি ফ্যাসিবাদী উত্থান হয় তাহলে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণরাই বিপদে পড়বে।
বুধবার প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে এনসিপি। এতে ঢাকা ৭ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক মোহাম্মদ আদেল, রংপুর ১ আসনে জাতীয় ছাত্রসমাজ (জিএম কাদের অংশ) সদ্য বিদায়ী সভাপতি আল মামুন, নীলফামারী ৩ আসনে জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি (রওশনপন্থী) আবু সাঈদ লিওনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরা তিনজনই জুলাই আন্দোলনের সময় জাতীয় পার্টির দলীয় পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ ৫ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এরশাদ সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী মনজুর কাদেরকে।
এবিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগীয় সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, পতিত স্বৈরশাসক যাদেরকে সঙ্গী করে মানুষের উপর অত্যাচার করেছে, যে জাতীয় পার্টি “বলে তাদের শক্তি ভারত”। তারা দেশের শক্তি নয়। যদি কোন দল চিহ্নিত দোসরদের মনোনয়ন দেয় এটি অগ্রহণযোগ্য। যে দল তাদের জাতীয় পার্টির নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছে তারা স্ববিরোধী ভূমিকা পালন করেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, এনসিপি তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দল। এরা ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, কথা বলেছে। আর যদি তারা ফ্যাসিস্টদের মনোনয়ন দেয় তাদের কথার সাথে কাজের মিল রইলো না।
এবিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন এনসিপি তাদের গ্রহণ করেছে। যারা পূর্বের পরিচয় ঝুঁকিতে ফেলে আন্দোলন শরিক হয়েছে তাদেরকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। যারা আন্দোলনে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন তাদের সাথে কোন আপোষ নেই। আমরা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকলকে স্বাগত জানাই।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের অপর উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, তরুন বন্ধুদের সমালোচনা করতে চাই না। তারা যদি ভু্ল পথে চলে তাদের সতর্ক করা উচিত। মনোনয়নের বিষয়টি যদি বাহাবাহা নেওয়ার জন্য করে তবে ভিন্ন কথা। কিন্তু আদর্শের কথা বললে এর হিসেব পাওয়া যাবে না। ইদানিং তাদের কথা-বার্তা বা কর্মকাণ্ড কেমন যেন মনে হয়। এনসিপি যদি চিহ্নিত কোন দোসরের সহযোগীকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তাদের সততার জায়গায় কিছুটা হলেও মরিচা ধরবে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া এনসিপির সমালোচনা করে বলেন, মূলত এনসিপির অনেক নেতা সরাসরি ছাত্রলীগ করতেন। এরা শুধু দোসরই নন, সরাসরি ফ্যাসিস্ট। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে দোসর বলে। অথচ, ইতিমধ্যে জাপার অনেক নেতাকে এনসিপি মনোনয়ন দিয়ে প্রমাণ করেছে জাতীয় পার্টি দোসর নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে ঘায়েল করার জন্য তারা অপপ্রচারে লিপ্ত।
সুত্র : ঢাকা টাইমস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



