জুমবাংলা ডেস্ক : মনের মধ্যে যখন খুশি, এই ছবিটি আঁকি, এক পাশে তার জারুল গাছে, দুটি হলুদ পাখি- জারুলের রঙে মুগ্ধ হয়ে কবি আহসান হাবীব তার স্বদেশ কবিতায় এভাবেই জরুলের বন্দনা করেছেন। শুধু আহসান হাবীবই নয়; ‘রুপসী বাংলার কবি’ জীবনানন্দ দাশও জারুলের শৈল্পিক রূপের অভিব্যক্তি ঘটিয়েছেন কবিতায়।
লিখেছেন, ‘ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ-দুপুর-চিল একা নদীটির পাশে, জারুল গাছের ডালে বসে বসে চেয়ে থাকে ওপারের দিকে।’ কবিতার সেই বন্দনার জারুল ফুলের মায়াবী সৌন্দর্য ছেঁয়েছে রাজশাহী নগরীর পথ-প্রান্তরে।
নগরীতে গত কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে ঝরছে বৃষ্টি। মেঘলা আকাশ ও এক শপলা বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ পরপর ভিজছে প্রাণ-প্রকৃতি। মাঝের বিরতির সময়টায় বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রাণ ফেরা প্রকৃতির মায়াবী রুপ বেশ উপভোগ্য। আর এই সৌন্দর্যের ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে জারুল ফুল। সবুজ পাতা, হালকা বাদামি বর্ণের বাকল আর মুক্ত পাপড়িতে গঠিত ও হলুদ রঙের পরাগবিশিষ্ট মায়াময় জারুল ফুলের উপর যখন বৃষ্টি কণার অন্তরঙ্গ স্পর্শ একত্রিত হচ্ছে, তখন প্রেমিক মনে অজান্তেই ভিন্ন তরঙ্গ জেগে উঠতে পারে।
জারুলের নজরকাড়া সৌন্দর্য যে কারও মনেই গভীর আবেদন সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে নগর সড়কে চলাচল করতে গিয়ে আইল্যান্ডে ফুটে থাকা থোকা থোকা জারুলের সৌন্দর্যের প্রেমে আটকে যায় পথচারীদের মন। আর অকপটেই বলে উঠছেন, ‘সত্যি, জারুলের সৌন্দর্যের দিক থেকে অতুলনীয়’।
নগরীর রেলগেট থেকে ঐতিহ্য চত্বর হয়ে বাইপাস সড়কের আইল্যান্ডে ফুটে রয়েছে অসংখ্য জারুল ফুল। এ পথ দিয়ে চলাচলকারীরা এই সৌন্দর্যের মায়ার বাধনে যে আটকাচ্ছেন, তা তাদের মুখ নি:সৃত কথার ফুল ঝুঁড়িতেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
অফিস শেষ করে ক্লান্ত শরীরে এই পথ দিয়েই বাড়ি ফিরছিলেন আফরোজা নাজনীন। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিনই এই পথ দিয়ে যাওয়া আসা করি। অফিসের ক্লান্তিগুলো এই পথ অনেকটাই দূর করে দেয়। তবে যখন আইল্যান্ড ফুলের শোভিত থাকে, সেই দৃশ্য মুগ্ধতা ছড়ানোর মতো। আর জারুলের সৌন্দর্য তো সত্যিই অসাধারণ। ইচ্ছে করে বাসায় নিয়ে যায়।
শুধু যে নগর সড়কেই জারুলের সৌন্দর্য এমনটা নয়; জরুলের বিশাল সমাহার রয়েছে দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজের ক্যাম্পাসজুড়ে। যেখানে শিক্ষার্থীসহ অনেক দর্শনার্থীও এই সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
এই কলেজের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম। তিনি বলেন, রাজশাহী কলেজের সাজানো-গুছানো ফুলের সৌন্দর্যের মাঝে জারুলের সমাহার অধীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকার মতো। বিশেষ করে রাস্তার ধারে জারুলের নতুন করে লাগানো চারা গাছগুলোতে যে ফুলগুলো ফুটেছে তা হৃদয় স্পর্শকারী।
গ্রীষ্মের শুরু থেকে থোকায় থোকায় ফোটে বেগুনি রঙের জরুল ফুল। গ্রীষ্ম থেকে শরৎ পর্যন্ত ফুলের স্নিগ্ধতা থাকে গাছে গাছে। মাঝারি আকৃতির এই গাছটি ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। রাজশাহী কলেজে প্রতিটি গাছের সঙ্গে তাদের বৈজ্ঞানিক নাম ও পরিচয় আছে। যা থেকে শিক্ষার্থীরা গাছ সর্ম্পকে গাছের পাশে দাঁড়িয়েই জানতে পারছে।
জারুলের মায়াবী সৌন্দর্য ছাড়াও একটি ওষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। এর বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতা মানবকল্যাণে উপকার সাধন করে গাছটি। সৌন্দর্য ও গুণে অপরূপ জারুল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।