জুমবাংলা ডেস্ক : পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলা ফসল তাই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে দেশের চাহিদার পাশাপাশি কৃষক ফসলের উচ্চমূল্য পেতে পারে। সে রকম একটি পেঁয়াজ হলো বারি পেঁয়াজ-৫। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি পেঁয়াজ-৫ গ্রীষ্ম/খরিফ মৌসুমে আবাদের জন্য মুক্ত করেছে।
বারি পেঁয়াজ-৫ এর বৈশিষ্ট্য :
১. গাঢ় লালচে বর্ণের চেপ্টা, গোলাকার ও কম ঝাঁঝযুক্ত
২. প্রতিটি গাছ ৫৫-৬০ সেমি উঁচু ও ১০-১২টি পাতা থাকে
৩. প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন ৬০-৭০ গ্রাম হয় ও ব্যাস ৫ সেমি.
৪. বীজ বপন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত ৯৫-১১০ দিন সময় লাগে।
৫. হেক্টরপ্রতি ফলন ১৮-২০ টন বা বিঘায় ২৪০০ থেকে ৩০০০ কেজি পর্যন্ত
মাটি : উঁচু, সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে দো-আঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম।
বীজ বপন ও চারা রোপণ : সাধারণত চারা তৈরি করেই ‘বারি পেঁয়াজ-৫’ চাষ করা হয়। বীজ বপনের সময় অত্যাধিক রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলিথিন/চাটাই ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রখর রোদ ও বৃষ্টির সময় বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে, অন্য সময় বীজতলা উন্মুক্ত রাখতে হবে। প্রথম দিকে খরার কারণে জমিতে রসের অভাব থাকে বলে বীজতলায় ঘন ঘন সেচ দিয়ে গজানোর পূর্ব পর্যন্ত (৫-৬ দিন) ঢেকে রাখতে হয়।
বীজ হার : বিঘাপ্রতি ৬৫০ গ্রাম বা ১ লক্ষ ২০ হাজার চারা।
আগাম চাষ : মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপন করা যায়। তবে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা উৎপাদন করা উত্তম। অতঃপর ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।
নাবি চাষ : নাবি চাষের ক্ষেত্রে জুলাই থেকে আগস্ট মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। পরবর্তীতে ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।
বেড তৈরি ও আগাছা পরিষ্কার : প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা সম্পূর্ণরূপে তুলে ফেলতে হবে। তারপর ১০ ফুট লম্বা ও ৩ ফুট চওড়া আকৃতির বেড তৈরি করে এক সপ্তাহ রেখে দিতে হবে। এক সপ্তাহ পর বেডগুলি পুনরায় কুপিয়ে আগাছা বেছে বীজ বপন করতে হবে।
বপনের জন্য বীজ প্রস্তত করা : বপনের আগে বীজ কমপক্ষে এক ঘণ্টা রোদে শুকিয়ে ছায়ায় রেখে ঠা-া করে নিতে হবে। অতঃপর বীজ সন্ধ্যায় ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে উঠাতে হবে। বীজগুলো পানি থেকে উঠানোর পর গামছা বা পাতলা কাপড়ের ব্যাগে ঝুলিয়ে রেখে সম্পূর্ণ পানি মুক্ত করে নিয়ে ঝুরঝুরে অবস্থায় এলে বীজ বপন করতে হবে।
বীজ বপনের পর করণীয় : বীজ বপনের পর আলাদা ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে বীজগুলো ঢেকে দিতে হবে। তারপর হাত বা কলাগাছের টুকরা দিয়ে মাটি সুন্দরভাবে চেপে শক্ত করে দিতে হবে। বীজ ফেলার পরদিন বেডে ছায়া দেয়ার জন্য প্রতি বেডে ৫টি করে বাঁশের বাতি অর্ধ চন্দ্রাকারে এমনভাবে বসানো হয় যেন বাতির দুই মাথা ড্রেনের মধ্যে থাকে এং বেডের ঠিক মাঝখান হতে বাঁশের বাতির উচ্চতা ১৮ ইঞ্চি হয়। পরের দিন পানি দিয়ে বীজতলা এমনভাবে চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যেন চটের দুই মাথা খোলা থাকে। বীজ গজানোর আগে দিনের বেলা বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে এবং রাতে খোলা রাখতে হবে। প্রয়োজনবোধে বীজতলায় ঝরনা দিয়ে পানি দিতে হবে।
বীজ গজানোর পর করণীয় : বীজ গজানোর পর সকাল ও বিকাল ছাড়া অবশিষ্ট সময় বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে। চারা যত বড় হতে থাকবে ঢাকার সময় তত কমাতে হবে। চারার দৈর্ঘ্য ০.৫ থেকে ১ ইঞ্চি হলে আর ঢাকার প্রয়োজন হবে না। বীজতলায় এক সপ্তাহ পরপর রিডোমিল অথবা রোভরাল দুই গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ড্যাম্পিং অফ রোগ দমনের জন্য স্প্রে করতে হবে। বীজতলায় রস না থাকলে চারা উত্তোলনের এক ঘন্টা পূর্বে ঝরনা দিয়ে সেচ দিতে হবে আর রস থাকলে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : সফলভাবে খরিফ পেঁয়াজ চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি গোবর ৫ টন, ইউরিয়া ১৫০ কেজি, এমওপি ১৭৫ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি, জিপসাম ১০০ কেজি এবং জিংক সালফেট ১২ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট ও আগাম চাষের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে। নাবি চাষের জন্য ১/৩ ভাগ ইউরিয়া অন্যান্য সারের সাথে শেষ সেচ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ২/৩ ভাগ ইউরিয়া যথাক্রমে ২০-২৫ দিন ও ৫০-৫৫ দিন পর পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে প্রয়োজনীয় রস না থাকলে সারের পার্শ্ব প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে।
পরিচর্যা : পেঁয়াজের চারা রোপণের পর একটি প্লাবন সেচ অবশ্যই দিতে হবে। মাটিতে চটা বাঁধলে কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। অতএব, মাটির ‘জো’ আসার সাথে সাথে চটা ভেঙে দিতে হয় ও আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। নিড়ানির সাথে সাথে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া ঢেকে দিতে হবে।
রোগবালাই এবং পোকামাকড় দমন : পেঁয়াজে পার্পল ব্লচ, গোড়া পচা এসব রোগ হতে পারে। এগুলো দমনের জন্য রিডোমিল গোল্ড, ডায়থেন এম-৪৫, রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি জাতীয় ওষুধ ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। পোকা মাকড়ের মধ্যে থ্রিপস এবং জাব পোকা মারাত্মক। এসব দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : পেঁয়াজের গাছ পরিপক্ব হলে এর গলার দিকের টিস্যু নরম হয়ে যায়। ‘বারি পেঁয়াজ-৫’ এর চারা থেকে কন্দের পরিপক্বতা হওয়া পর্যন্ত আগাম চাষের ক্ষেত্রে মাত্র ৬০-৭০ দিন এবং নাবি চাষের ক্ষেত্রে ৯৫-১১০ দিন দরকার হয়। পাতা ও শিকড় কেটে শীতল ও ছায়াময় স্থানে ৮-১০ দিন রেখে কিউরিং করতে হবে।
বর্ষাকালীন ফসল বিধায় উত্তোলনকৃত পেঁয়াজ ২-৩ দিন এমনভাবে রেখে শুকাতে হবে যাতে কন্দে সরাসরি রোদ না লাগে। এরপর বাছাই ও গ্রেডিং করার পর বাঁশের মাচা, ঘরের সিলিং, প্লাস্টিক বা বাঁশের র্যাক অথবা ঘরের পাকা মেঝেতে শুষ্ক ও বায়ু চলাচল যুক্ত স্থানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। তবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে বলে ইহা এক মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না।
গ্রীষ্মকালীন জাত বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ পদ্ধতি লেখাটির লেখক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। ফোন : ০২৫৫০২৮৪৪১।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।