ফরিদপুরে নগরবাউল জেমসের বহুল প্রতীক্ষিত কনসার্ট শেষ মুহূর্তে পণ্ড হয়ে গেছে। ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিনে বহিরাগতদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বিশৃঙ্খলার কারণে বাতিল করা হয় রাতের কনসার্টটি। ঘটনাটিকে নিজের জীবনের অন্যতম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বলে উল্লেখ করেছেন অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক শ্রাবণ্য তৌহিদা।

ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে পুনর্মিলনী ও বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) গান গাওয়ার কথা ছিল নগরবাউলখ্যাত জেমসের। এর আগের দিন অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়, যেখানে ব্যান্ড ওয়ারফেজ পারফর্ম করে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে কনসার্ট শুরুর আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। নিরাপত্তা জোরদার থাকা সত্ত্বেও বহিরাগতদের একাংশ দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে শুরু হয় হট্টগোল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। ঘটনার সময় মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন শ্রাবণ্য তৌহিদা। নিজের চোখে দেখা সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সুন্দর একটি আয়োজন মুহূর্তের মধ্যেই আতঙ্কের পরিবেশে রূপ নেয়। ঢাকায় নিরাপদে ফিরলেও মানসিক ট্রমা এখনো কাটেনি, মনের ভেতর রয়ে গেছে গভীর এক কালো দাগ।
শ্রাবণ্য জানান, দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান খুব সুন্দরভাবেই এগোচ্ছিল। কারণ সেদিন পারফর্ম করার কথা ছিল জেমসের, আর দর্শকদের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। একপর্যায়ে তিনি মঞ্চে র্যাফেল ড্র পরিচালনা করছিলেন। হঠাৎ বাইরে থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায়। আয়োজকেরা বারবার জানাচ্ছিলেন, বহিরাগতদের জন্য বাইরে বড় পর্দায় অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও একদল মানুষ দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, যতই শান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছিল, পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছিল। ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয়। হঠাৎ একটি বড় ইট এসে পড়ে মঞ্চে, ঠিক তার সামনে। তাকিয়ে দেখেন, শত শত মানুষ দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের থামানোর চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে একপর্যায়ে তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে কনসার্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দীর্ঘদিন উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত শ্রাবণ্য তৌহিদা বলেন, তার ক্যারিয়ারে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি তিনি আগে কখনো হননি। এই অভিজ্ঞতা তার জীবনে গভীর ছাপ রেখে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভালোবাসি বলেই এমন ঘটনা আরও বেশি কষ্ট দেয়। স্কুলের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী এসেছিলেন। নবীন-প্রবীণ সবার উচ্ছ্বাস মুহূর্তের মধ্যে ভয় আর হতাশায় বদলে যায় এটা কারও কাম্য নয়।
শ্রাবণ্য আরও জানান, শুনেছেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। এই বিশৃঙ্খলায় ১৫ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, অনেকের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে মানুষজন বিভ্রান্ত ও আতঙ্কের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এই আশায় যে পরিস্থিতি হয়তো স্বাভাবিক হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আয়োজকদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হয়।
পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিল্পী হিসেবে তিনি ও জেমস দুজনেই পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কিন্তু টাকা কখনোই মানসিক আঘাত, ভয় আর হতাশা মুছে দিতে পারে না। আহতদের কষ্ট কিংবা হাজারো দর্শকের ভেঙে যাওয়া অপেক্ষার কোনো মূল্য টাকায় শোধ হয় না। যারা ভালোবাসা ও সংগীতের টানে এসেছিলেন, তারা ভয় আর বিষণ্নতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক।
শেষে শ্রাবণ্য বলেন, এই ঘটনায় শুধু একটি কনসার্টই বাতিল হয়নি, বরং এমন একটি স্মৃতি তৈরি হয়েছে, যা সবার মনে গভীর মানসিক ক্ষত রেখে গেছে। এটি ছিল সত্যিই হৃদয়বিদারক ও ভীষণ হতাশাজনক এক অভিজ্ঞতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



