জুমবাংলা ডেস্ক : টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরযাত্রায় জেলেদের জালে মিলেছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। গত ২ বছরের মন্দা কাটিয়ে ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের এমন প্রাচুর্যে হাসি ফুটেছে জেলে, ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীদের মুখে।
এখানকার ইলিশ এখন পদ্মা সেতু পাড় হয়ে সহজেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। দামও ক্রমশ কমতে শুরু করেছে।
গত রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর মৎস্য বন্দরে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে একের পর এক মাছ বোঝাই ফিশিং ট্রলারগুলো এসে ভিড়ছে। শ্রমিকরা এসব ট্রলার থেকে মাছ আড়তে উঠাচ্ছেন। সেই সঙ্গে উম্মুক্ত দরদামে পাইকারদের কাছে মাছ বিক্রি হচ্ছে। দেশের নানা প্রান্তের ক্রেতা উপস্থিত থাকায় বাজার দরও ভালো। পাইকারি বাজারে ২৪ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ।
‘আল্লাহ মালিক’ নামের ফিশিং ট্রলারের মাঝি আনসার উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ১৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। আবার সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
পাইকারি ক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এখানে ৪০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের প্রতিমণ ইলিশ ২৪ হাজার টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকা, ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিমণ ইলিশ ৩৮ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ৪২ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
বাজারে বেশি ইলিশ থাকায় দাম কমছে বলেও জানান তিনি।
গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে জেলেরা সাগরে মাছ ধরা শুরু করলে তাদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পড়ছে বলে জানান শাহজালাল মাঝি। বলেন, ‘মাছগুলো আকারেও বেশ বড় এবং বাজারে দামও ভালো।’
মহিপুর বন্দর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন অহমেদ মাসুম বলেন, ‘সাগরে এখন অনেক ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এই বন্দর এখন দিন-রাত সরগরম থাকছে। পাইকারি ক্রেতা, জেলে ও শ্রমিকদের পদচারণায় বাজার মুখরিত।’
তার হিসাবে, এখানে গড়ে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। ‘খুচরা বাজারেও ইলিশের দাম কমেছে’ জানিয়ে পটুয়াখালী শহরের নিউমার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী মাসুম বেপারী বলেন, ‘খুচরা বাজারে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়, ৪০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় এবং ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘পটুয়াখালীর খুচরা বাজারে ১ কেজি পর্যন্ত ইলিশ ৭৫০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
ইলিশের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কম বলে জানান তিনি।
পটুয়াখালী শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ইলিশ এখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে। বাজারে দাম তুলনামূলক কম। এখন অনেকেই ইলিশ কিনছেন।’
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞারর সুফল ও অনুকূল আবহাওয়া থাকায় জেলেদের জালে বেশি পরিমাণে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে। আশা করছি, এই অবস্থা পুরো মৌসুম বহাল থাকবে বলে।’
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় ৪৮ হাজার ৩৯৮ সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন। এ বছর তাদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। দামও বেশ ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে পটুয়াখালী জেলায় ৫৭ হাজার ৯৮৬ মেট্রিক টন ইলিশ সংগ্রহ করা হয়েছিল। সবকিছু অনুকূলে থাকলে এ বছর আরও বেশি ইলিশ সংগৃহীত হবে বলে আশা করছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।