জুমবাংলা ডেস্ক : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতককে নিজের সন্তান বলে দাবি করেছেন আপন দুই বোন। মা দাবি করা দুই বোন ও এক বোনের স্বামী বর্তমানে শ্রীপুর থানা-পুলিশের হেফাজতে আছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) প্রথমে এক দম্পতি থানায় এসে নিজেদের ওই নবজাতকের মা-বাবা দাবি করেন। একপর্যায়ে আরেক তরুণী থানায় এসে বলেন, তিনি ওই নবজাতকের মা। দাবিদার দুইজনই সম্পর্কে দুই বোন।
এর আগে বুধবার (১৭ মে) ভোরে শ্রীপুরে একটি ঝোপে নবজাতক কন্যাশিশুকে দেখতে পান স্থানীয় এক গৃহবধূ। পরে তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে নবজাতকটি সুস্থ আছে। তবে পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় নবজাতককে আরও চার দিন হাসপাতালে চিকিৎসকদের হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দম্পতি শ্রীপুর থানায় এসে নিজেদের নবজাতকের মা-বাবা দাবি করলেও পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে ১৯ বছর বয়সী আরেক তরুণী এসে নিজেকে শিশুটির প্রকৃত মা বলে দাবি করেন। পুলিশ বলছেন প্রথম যে নারী শিশুটিকে তার বলে দাবি করেছিলেন, পরে দাবি নিয়ে আসা তরুণী তারই ছোট বোন। তবে পুলিশ তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি।
ওই তরুণী দাবি করেছেন, একই এলাকার একটি ছেলের সঙ্গে তার প্রেম ছিল। বিয়ের আগেই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ওই তরুণীর বড় বোন নিঃসন্তান। এ কারণে তিনি সন্তানটি নিতে চেয়েছিলেন। তারা দাবি করেছেন, তিন দিন আগে বাড়িতে স্বাভাবিক প্রসবেই নবজাতকের জন্ম হয়। যুবকের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো, তিনি এখন পলাতক। ওই যুবককে খুঁজে বের করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে ওই তরুণীর যেহেতু বিয়ে হয়নি, তারা লোকলজ্জার ভয়ে নবজাতককে বুধবার ফজরের নামাজের সময় মসজিদের পাশে ঝোপের মধ্যে রেখে আসেন।
তাদের পরিকল্পনা ছিল, নবজাতকের কান্নার শব্দে মসজিদের ইমাম এসে শিশুটিকে উদ্ধার করবেন। এরপর ইমাম যখন ঘোষণা দেবেন, সবার আগে তরুণীর বোন গিয়ে নবজাতকটি দত্তক নিয়ে নেবেন। তবে ইমামের আগে স্থানীয় এক গৃহবধূ প্রথম দেখতে পাওয়ায় এসবের কিছুই হয়নি। যে কারণে তারা পরে থানায় যোগাযোগ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম আকরাম বলেন, ওই তরুণীর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নবজাতকের চিকিৎসা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে ওই নবজাতককে দত্তক হিসেবে পেতে অন্তত ১৭টি পরিবার আবেদন জানিয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, নবজাতকটি সুস্থ আছে। শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে দেখেছেন। সে এখন আমাদের উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে আছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামানন্দ কুণ্ডু বলেন, নবজাতকটির নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালে ৬ জন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানার চেষ্টা করা হবে, নবজাতকের মা দাবি করা তরুণী আসলেই তার মা কি না। তবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওই তরুণীকে নবজাতকের কাছে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। নিশ্চিত না হওয়ার আগপর্যন্ত ওই নবজাতককে হাসপাতালে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, শিশুকল্যাণ বোর্ডে এ নিয়ে একটি সভা হবে। সেখানে যাচাই-বাছাই করে ওই নবজাতকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যদি নবজাতকের মা-বাবাকে খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে তাদের কাছে দেওয়া হবে। তা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশারুল ইসলাম বলেন, আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কারও পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।