আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপরেই ছেড়ে দিতে চায় সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরায় ব্যবহার ভোটের ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। একই সঙ্গে সেগুলোর তদারকি করার লোকবল কমিশনের নেই। যে কারণে সংস্থাটি সিসি ক্যামেরার ব্যবহার নিজেরা করতে চায় না। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের কারণে তাদের মাধ্যমেই বিষয়টি বাস্তবায়নের পক্ষে ভোট আয়োজনকারী সংস্থাটি।
বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সঙ্গে আইন-শঙ্খলা বৈঠকের কার্যপত্র থেকে বিষয়টি জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) অনুষ্ঠেয় ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের সই করা কার্যপত্র বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করা জন্য যে কোনোভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে কার্যকর মনিটরিং ও দ্রুত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৪তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের জন্য ইসির কাছে আর্থিক সহায়তা চাইলে কমিশন সেই বিষয়টিতে কিছু করার নেই বলে জবাব দিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন যেসব প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা আছে, সেগুলোই ব্যবহার করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এরই মধ্যে মাঠ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের তালিকা পাঠাতে বলেছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯। এছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি।
এদিকে পুলিশের এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয সংসদ নির্বাচনের ৮ হাজার ২২৬ টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ অর্থাৎ মোট ভোটকেন্দ্রের ৬৭ শতাংশই এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্থাটি ভোটকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো, থানা থেকে দূরত্ব, কেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রভাবশালীদের বাসস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় কেন্দ্রের ধরন নির্ধারণ করেছে।
বৈঠকে কী পরিমাণ ফোর্স নিয়োগ হবে সে বিষয়টিও চূড়ান্ত হতে পারে। ইসি কর্মকর্তা বলছেন, গণভোট ও সংসদ ভোট একসঙ্গে হওয়ায় নতুন করে নিরাপত্তা ছক কষতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়তে পারে ফোর্স মোতায়েন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেট্রোপলিট্রন এলাকার বাইরে ও পার্বত্য এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের সদস্য নিয়োজিত ছিলো। মেট্রোপিলিটন এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য নিয়োজিত ছিল। ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৭২ জন ও আনসার ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন। এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিরি ১ হাজার ১১৫ প্লাটুন, কোস্টগার্ড ৭৫ প্লাটুন, র্যাব ৬০০ টিম, সেনাবাহিনী ৩৮ হাজার ১৫৪ জন, নৌবাহিনী দুই হাজার ৮২৭ জন নিয়োজিত ছিল। নির্বাচন কমিশন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলতে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে বোঝায়। এবার দু’টি ভোট একসঙ্গে হওয়ার এ সংখ্যা বাড়তে পারে।
অন্যদিকে ভোটের নিরাপত্তায় আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার রোধ ও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ; বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ; মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদনের জন্য রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অধিক সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন; সারাদেশ থেকে পোস্টার, ব্যানার, গেট, তোরণ ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী অপসারণ; নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় নির্ধারণ; ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনি এলাকা তথা সমগ্র দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
এছাড়া নির্বাচনী দ্রব্যাদি পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিতরণে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; পার্বত্য/দুর্গম এলাকায় নির্বাচনী দ্রব্যাদি পরিবহণ এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য হেলিকপ্টার সহায়তা প্রদান; রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের বাসস্থান ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ বাসস্থানের নিরাপত্তা জোরদারকরণ; এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির দায়িত্বপালনকালে পুলিশ ফোর্স নিয়োজিতকরণ; নির্বাচনি আইন, বিধি-বিধান প্রতিপালন নিশ্চিতকরণে করণীয় নির্ধারণ; নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরকে মোতায়েন পরিকল্পনা; গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের মতামত/পরামর্শের আলোকে শান্তিশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ; নির্বাচনে বিদেশী সাংবাদিক ও প্রাক-পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান; অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ; গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ; পোস্টাল ভোটিং (OCV-ICPV) ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা প্রদান; প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধের কৌশল নির্ধারণ; ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ নিয়েও বেঠকে আলোচনা হবে।
‘আমাকে যারা চেনেনি তারা মাটির নিচে বসবাস করে, আমার জন্য সূর্য দাঁড়িয়ে থাকবে’
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে গণভোট ও সংসদ নির্বাচন করতে চায় ইসি। এজন্য ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সব কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে সংস্থাটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



