ধর্ম ডেস্ক : জিলহজ মাসের মহিমান্বিত প্রথম দশককে ইবাদতের ভরা মৌসুম বলে উল্লেখ করেছেন ইসলামি আলোচক ও আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশেনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। এ সময়কে তাই ইবাদতের সৌরভে ভরিয়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ১১টি আমলের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৮ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এসব বিষয় তুলে ধরেন শায়খ আহমাদুল্লাহ।
জনপ্রিয় এ ইসলামি আলোচক সেখানে লিখেছেন, রমজানের পরে ইবাদেতের সবচেয়ে বড় মৌসুম হলো জিলহজের প্রথম দশক। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে অন্য যে কোনো সময়ের আমলের চেয়ে জিলহজের প্রথম দশকের আমল অধিক প্রিয় (সহিহ বুখারি) তাই আসুন, এই শ্রেষ্ঠ দশককে ইবাদতের সৌরভে ভরিয়ে তুলি।
তিনি লিখেন, আজকাল জিলহজ বলতে মানুষ কেবল কোরবানি বোঝে। জিলহজের প্রথম দশক যে ইবাদতের ভরা মৌসুম, এটা মানুষ জানে না। অবহেলিত এ ইবাদতের মৌসুম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।
তাকবির এই দিনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ আমল উল্লেখ করে শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেন, সাহাবিগণ এই দশকে তাকবিরের আমলকে এত গুরুত্ব দিতেন— তারা তাকবির সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করতে বাজারে চলে যেতেন। আমরাও এই দশকে বেশি বেশি তাকবিরের আমল করি, অন্যকে উৎসাহ দিই।
তাকবির: আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
পোস্টে নিজের একটি বড় লেখাও শেয়ার করেছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ, যেখানে তিনি জিলহজের মহিমান্বিত প্রথম দশকের ১১টি আমলের কথা উল্লেখ করেছেন:
১. অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, যেন তারা তাদের জন্য স্থাপিত কল্যাণসমূহ প্রত্যক্ষ করে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সুরা হজ: ২৮)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ওই আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলে জিলহজের প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৫/৪১৫)
২. নেক আমল ও ভালো কাজের প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া। কেননা, মহান আল্লাহর নিকট অন্যান্য সময়ের আমলের চেয়ে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল অধিক প্রিয়। (সহিহ বোখারি: ৯৬৯, সুনানে আবু দাউদ: ২৪৩৮)
৩. অন্য সময়ের তুলনায় এই দিনগুলোতে পাপকাজ পরিহারে অধিক সচেষ্ট থাকা। (সুরা হজ: ২৮, সহিহ বুখারি: ৯৬৯)
৪. সামর্থ্যবান হলে হজ করা। কেননা, হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ওপর হজ ফরজ। আবার কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু্ নয় মর্মে নবিজির (সা.) সুসংবাদ রয়েছে। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭, সুনানে তিরমিজি: ৮১০)
৫. সামর্থ্য থাকলে কোরবানি করা। মহান আল্লাহ বলেন, তুমি নিজের প্রতিপালকের জন্য নামাজ আদায় করো ও কোরবানি করো। (সুরা কাউসার: ২)
৬. কোরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির কোরবানি করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল, ও অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকা। (সহিহ মুসলিম: ৫০১৫)
এ হাদিসে যদিও কোরবানিদাতাকে চুল, নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, তবে বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য নেই, তারাও ফজিলতপূর্ণ এ আমলটি করতে পারেন। এমনকি শিশুদেরকেও চুল-নখ কাটা থেকে বিরত রাখা উত্তম। (সুনানে আবি দাউদ: ২৭৮৯, আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন: ৭৫২০)
৭. অধিক পরিমাণে সাধারণভাবে তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা। অর্থাৎ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ পড়া।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর নিকট জিলহজের দশদিনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় আমল নেই। অতএব, এ দিনগুলোতে তোমরা অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করো। (আল-মুজামুল কাবির: ১১১১৬)
৮. তাশরিকের দিনগুলোতে প্রত্যেক নামাজের শেষে বিশেষভাবে তাকরিরে তাশরিক পাঠ করা। অর্থাৎ ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ যিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতি নামাজের পর একবার ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৫৬৩১)
৯. প্রথম নয়দিন রোজা রাখা। কোনো কোনো বর্ণনায় জিলহজের প্রথম নয় দিনই রোজা রাখার নির্দেশনা পাওয়া যায়। এই দিনগুলোর নেক কাজ আল্লাহর প্রিয় হওয়ায় এর সবগুলো দিনই নফল রোজা রাখা যায়। অনেক ইমামগণ জিলহজের প্রথম নয় দিন রোজা রাখাকে মুস্তাহাব বলেছেন।
১০. আরাফার দিন বিশেষভাবে রোজো রাখা। আরাফার দিন রোজা রাখলে আশা করা যায় মহান আল্লাহ তার পেছনের এবং সামনের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
১১. ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ পালন করা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।