জুমবাংলা ডেস্ক : ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী এম ভি আব্দুল্লাহর নাবিক ও ক্রুদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাহাজটির তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং। তবে তারা নাবিকদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। যার নাম এমভি আবদুল্লাহ, পণ্যবাহী জাহাজটি কয়লা নিয়ে, ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল দুবাই। বুধবার (১৩ মার্চ) মালিকপক্ষ জিম্মি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে প্রথমে নাবিকদের সুরক্ষার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। জলদস্যুরা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করেনি। তারা সুস্থ আছেন। জাহাজে নাবিকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটি নিয়ে আসলে বিচলিত হওয়ারও কিছু নেই। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতাও আছে। আমরা আশা করছি, অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নাবিক ও জাহাজটি ফিরিয়ে আনতে পারবো।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন ব্লগার আবদুল্লাহিল মারুফ। এতে সোমালি জলদস্যুরা জিম্মিদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করেন তার বর্ণনা দেন।
মারুফ নিজেও একজন নাবিক, যিনি সমুদ্রগামী জাহাজে বসে ব্লগ করেন। গতকাল পোস্ট করা ভিডিওতে এম ভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,
সাধারণত সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশিদের খুব বেশি ক্ষতি করে না। ওরা জাহাজে আসার পর জাহাজের সমস্ত খাবার এবং পানি দখলে নিয়ে নিবে। এছাড়া সবাইকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাবে এবং সেখানেই রাখবে।
এরপর জাহাজটাকে ওদের পছন্দের একটা জায়গা নিয়ে যাবে এবং একটা মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ দাবি করবে। এই মুক্তিপণ না দেয়া পর্যন্ত জিম্মি সবাইকে এভাবেই রাখবে। কিন্তু বড় ধরনের কোনো ক্ষতি তারা করবে না বলে জানান তিনি।
জনপ্রিয় এ ব্লগার বলেন, ওরা (সোমালি জলদস্যু) বাংলাদেশিদের প্রতি, মুসলিমদের প্রতি যথেষ্ট সহনশীল। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই। অপেক্ষা করুন। ইনশাআল্লাহ এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজটি এস আর শিপিংয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছিল। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই আসছিল পণ্যবাহী জাহাজটি।
এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরেই সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল, একই প্রতিষ্ঠানের এম ভি জাহান মণি নামে অপর একটি জাহাজ। জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রেখেছিলেন সোমালিয়ান জলদস্যুরা। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে মারুফ বলেন, ওরা যে খাবার এবং পানি দেয় সেটা খুবই সীমিত। এই অবস্থায় ওদের সাথে থাকতে কষ্ট হবে, কিন্তু বড় কোনো ক্ষতি হবে না। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এরপর অন্তত ১০০ জলদস্যু জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
জাহাজে থাকা এক নাবিক জানান, শতাধিক জলদস্যু ছোট ছোট বোটে করে প্রথমে জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে। পরে তারা সশস্ত্র অবস্থায় জাহাজে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে জলদস্যুরা কোনো নাবিকের ওপর হামলা চালায়নি।
এম ভি আবদুল্লাহ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই আসছিল। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে জাহাজের ২৩ জন ক্রুর পরিচয় মিলেছে। জাহাজের মাস্টার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, থার্ড অফিসার হিসেবে আছেন ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল, ডেক ক্যাডেট হিসেবে আছেন টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির।
এছাড়া চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নওগাঁর শাহিদুজ্জামান এ এস এম, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন খুলনার ইসলাম মো. তৌফিকুল, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নেত্রকোণার উদ্দিন মো. রোকন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের আহমেদ তানভীর, ইঞ্জিন ক্যাডেট হিসেবে আছেন লক্ষ্মীপুরের থান আইয়ুব, ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আছেন উল্লাহ ইব্রাহিম খলিল, এবিল সি-ম্যান (নাবিক) হিসেবে আছেন নোয়াখালীর হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল, চট্টগ্রামের রহমান মো. আসিফুর, চট্টগ্রামের হোসাইন মো. সাজ্জাদ, অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) হিসেবে আছেন নাটোরের মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল, ওয়লার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের হক আইনুল, চট্টগ্রামের শামসুদ্দিন মোহাম্মদ, বরিশালের হোসাইন মো. আলী, ফায়ারম্যান হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের উদ্দিন মোহাম্মদ নূর এবং ফাইটার হিসেবে আছেন নোয়াখালীর আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ।
এদিকে জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান এক অডিও বার্তায় মঙ্গলবারই জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের কর্মকর্তাদের কাছে কী পরিমাণ খাবার ও পানি আছে জাহাজে এসব তথ্য জানিয়েছেন। জাহাজটি জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর পরই তাদের এ বার্তা পাঠান তিনি।
আতিকউল্লাহ খান অডিও বার্তায় বলেন, আমাদের জাহাজে ২০–২৫ দিনের রসদ (খাবার) আছে। ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি আছে। আর জাহাজে রয়েছে ৫৫ হাজার টন কয়লা।’ রসদ যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায়, সে জন্য অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে জানানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।