জুমবাংলা ডেস্ক : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের কর্মীদের অতর্কিত হামলায় এক নারীসহ দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীরা জানান, শহীদ মিনারে জুতা পায়ে নিয়ে ওঠাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে রসায়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালান শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ হামলায় নেতৃত্ব দেন মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাশ। অনিক শাখা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের একনিষ্ঠ কর্মী বলে জানা যায়।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, হামলায় রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না তাবাসসুম ও আকাশ আলী আহত হন। তাদের দু’জনকে আহত অবস্থায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে আকাশকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুতা পায়ে একজন মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থী শহীদ মিনারে উঠলে প্রতিবাদ করেন আকাশ। এরপর তাদের মাঝে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠা মেয়েটির বন্ধু মাহী আকাশকে ধাক্কা দিতে গেলে আকাশ তার হাত সরিয়ে দেয়। এ সময় মাহী তার বিভাগের বন্ধু অনিককে ফোন দেয়। এরপর অনিকের সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী এসে আকাশকে পেটাতে শুরু করে।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বলেন, আমি অবাক হয়ে গেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। আমার সামনেই আমার শিক্ষার্থীকে তিন দফা মেরেছে তারা। আমি এ হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
হামলার ঘটনায় আকাশ বলেন, আমরা বিভাগের অনুষ্ঠানের জন্য স্টেজের কাজ করছিলাম। বিদ্যুৎ চলে গেলে চা খাওয়ার জন্য নিচে আসি। তখন একজন নারী শিক্ষার্থী ও তার সঙ্গে থাকা একজন ছেলেকে জুতা পায়ে শহিদ মিনারে ওঠেন। তাদেরকে এ বিষয়ে বললে মেয়েটি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা তাই জুতা পায়ে উঠেছি।’ একপর্যায়ে ছেলেটি আমার ওপর চড়াও হয়। এরপর আমি তাকে আঘাত করেছি, এটা বলে তার বন্ধু অনিককে ফোন দেয়।
তিনি আরও বলেন, তখন অনিক এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এরপর তার সঙ্গে থাকা প্রায় ১৫ জনের বেশি ছেলে এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অনিকই আমার ওপর প্রথম হামলা শুরু করে। তারা আমাকে কয়েক দফায় শহিদ মিনার এবং গণিত বিভাগের সামনে হামলা করে। আমার বুকে কিল-ঘুষি ও পেটে লাথি মারে। শহীদ মিনারে থাকা একটি বাঁশ দিয়েও আমাকে আঘাত করে অনিক। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বান্ধবী তামান্না ও বাসারও আহত হয়।
হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক বলেন, আমার বন্ধু মাহী আমাকে ফোন দিলে শহিদ মিনারে যাই। গিয়ে দেখি তার (মাহী) সঙ্গে একজনের (আকাশ) কথা কাটাকাটি চলছে। আমি অসুস্থ থাকায় পেছনে ছিলাম, বাকিরা গিয়ে আকাশকে মেরেছে। আমি কোনো হামলা করেনি।
রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, আমার বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকের সামনে মারছে এটা দুঃখজনক। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই আমার সন্তান। সন্তানের শরীরে এমন আঘাত দেখলে যেকোনো পিতারই কষ্ট হবে। অব্যশই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে বলে আমাকে বলেছে।
হামলার ঘটনায় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, এটা বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটা বিষয় বলে জেনেছি। ছাত্রদলের কেউ জড়িত কিনা খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শহীদ মিনার একটা মারামারির ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। সহকারী প্রক্টর ফেরদৌস স্যার তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়েছেন। রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।