বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : আগামী দুই দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং রোবটিক্স প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে এক বিশাল পরিবর্তনের ঢেউ আনতে চলেছে। এই রূপান্তরের ফলে অধিকাংশ প্রচলিত চাকরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে — এমনটাই মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানী ও ভবিষ্যৎ বিশ্লেষক অ্যাডাম ডর। তাঁর মতে, ২০৪৫ সালের মধ্যে AI এতটাই দক্ষ হয়ে উঠবে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের বদলে রোবট ও মেশিন লার্নিং সিস্টেম কাজ করবে।
সব শিল্পেই আসছে AI, মানুষের শ্রম হবে অপ্রাসঙ্গিক
ডর বলেন, “গাড়ি যেমন ঘোড়ার গাড়িকে বিলুপ্ত করেছে, বিদ্যুৎ যেমন গ্যাস ল্যাম্পকে ছাপিয়ে গেছে, কিংবা ডিজিটাল ক্যামেরা যেভাবে কোডাককে ইতিহাসে পরিণত করেছে—একইভাবে এবার পালা মানুষের শ্রমের।” তাঁর মতে, যখন দেখা যাবে একটি মেশিন কম খরচে, দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারে, তখন কোম্পানিগুলো আর মানুষকে দিয়ে সেই কাজ করাবে না।
তিনি আরও বলেন, “আপনি যেই খাতে কাজ করুন না কেন—AI এবং রোবটিক্স শিগগিরই সেই কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে এবং সস্তায় করতে পারবে।” ডর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা RethinkX-এর গবেষণা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন, যেখানে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও সমাজে তার প্রভাব নিয়ে গবেষণা হয়।
AI যুগে মানুষের জন্য বেঁচে থাকবে মাত্র তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র
যদিও এই প্রযুক্তিগত বিপ্লব অনেকের জন্য আশঙ্কার কারণ, ডর তাতে দেখেন এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত। তাঁর মতে, যদি এই পরিবর্তনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়, তবে এক ‘সুপার-অ্যাবান্ডেন্স’ বা প্রচুর সুযোগ-সুবিধার যুগ আসবে, যেখানে মানুষ শ্রমের পরিবর্তে সময় দিতে পারবে সৃজনশীলতা, অবসর এবং স্বাধীন জীবনে।
তবে মানুষের জন্য যেসব পেশা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
রাজনীতি
যৌন পেশা
নৈতিকতা ও সমাজসেবা সংশ্লিষ্ট কাজ
এই তিনটি ক্ষেত্রে মানুষের আবেগ, অভিজ্ঞতা, মূল্যবোধ এবং সামাজিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন হয়—যা এখনো কোনো মেশিন পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারে না। ডর বলেন, বিশেষ করে যেসব জায়গায় নৈতিক সিদ্ধান্ত, জটিল সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা বা সহানুভূতির প্রয়োজন—সেখানে মানুষের গুরুত্ব কখনোই হারাবে না।
AI কি সুযোগ, না কি বিপদের ইঙ্গিত?
এই AI-নির্ভর ভবিষ্যৎ একদিকে যেমন চাকরির জগতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, অন্যদিকে মানুষের জীবনযাত্রা ও কাজের ধরনে আমূল পরিবর্তন আনার সম্ভাবনাও রাখে। ডরের মতে, এটা এক দ্বিমুখী পথ — সঠিকভাবে পরিচালিত হলে AI মানবজাতিকে শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে পারে, আর ভুল ব্যবস্থাপনায় এটি গড়ে তুলতে পারে একটি বৈষম্যমূলক ও সংকুচিত ক্ষমতার বিশ্ব।
এই বিশ্লেষণ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এবং মানব শ্রমের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে এক নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। প্রশ্ন উঠেছে—আমরা কি প্রস্তুত এই রূপান্তরের জন্য? এবং ভবিষ্যৎ কি হবে মানুষের উপযোগে গড়া, নাকি কেবল মুনাফার ভিত্তিতে পরিচালিত?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।