বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নিয়ে এখন সারা বিশ্বে তোলপাড়। কিছুদিন পর পরই আসছে নিত্যনতুন ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের খবর। এসব সূত্রেই হল্লা উঠেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর দখলে চলে যাচ্ছে অনেক মানুষের চাকরি। অর্থাৎ, এখন মানুষেরা যোগ্যতা অনুযায়ী যেসব কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে, তাদের অনেকের চাকরি খেয়ে ফেলতে পারে এআই।
মজার বিষয় হলো, এমন গুঞ্জনের মধ্যেই বিশেষজ্ঞরা শোনাচ্ছেন অন্য এক খবর। বলছেন, এআই কিছু মানুষের চাকরি খাবে সত্যি। কিন্তু কিছু কিছু চাকরি আছে, যেগুলো অদূর ভবিষ্যতে খেতেই পারবে না রোবট বা এআই। মানুষের এমন কিছু কাজের বিষয়ই এ পর্বে জেনে নেওয়া যাক।
শুরুতে দেখা যাক, এআই বা রোবটের কারণে মানুষ কী পরিমাণ চাকরি হারাতে পারে! ২০২৩ সালের মার্চ মাসে গোল্ডম্যান স্যাকস এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে মানুষের করা কনটেন্ট জেনারেশনের মোট কাজের এক-চতুর্থাংশ করে ফেলতে পারবে এআই। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর হিসাব করলে প্রায় ৩০ কোটি চাকরি খেয়ে ফেলবে এআই। এবং এর প্রভাব হবে সত্যিকার অর্থেই ভয়াবহ।
আশার কথা হলো, দুঃসংবাদের পাশাপাশি সুসংবাদও আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব কাজে মানুষের মানবিক গুণাবলী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেসব কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অচল। বিশেষ করে যেসব কাজে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা এবং মৌলিক ও অভিনব চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন হয়, সেসব কাজ মানুষ দিয়েই করাতে হবে। সেখানে রোবট বা এআই দিয় কাজ হবে না।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কীভাবে মানবসভ্যতাকে বদলে দিতে পারে, তা নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা করেছে মার্টিন ফোর্ড। তিনি মূলত তিন ধরনের কাজের উল্লেখ করেছেন, যেগুলো রোবট বা এআই দিয়ে করানো নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব নয়।
প্রথমত, আক্ষরিক অর্থেই যে কাজগুলো সৃজনশীল, সেগুলোতে মানুষের বিকল্প নেই। অর্থাৎ, যেসব কাজ ফর্মুলা মেনে হয় না, নতুন ধারণা সৃষ্টি করতে হয় এবং স্রেফ উপাদানগুলো ওলট-পালট করেই ফলাফল পাওয়া যায় না, সেসব কাজ মানুষকেই করে যেতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে, এতদিন ধরে যেসব কাজ সৃজনশীল বলে মনে করা হতো, তার সবগুলোই টিকে থাকবে। যেমন: গ্রাফিক ডিজাইন ও ভিজ্যুয়াল আর্টের অনেক কাজ হয়তো ভবিষ্যতে করবে এআই। তবে বিজ্ঞান, ওষুধ ও আইনসংক্রান্ত কৌশল প্রণয়নের ঢের কাজ মানুষকেই করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব কাজ হয়, সেগুলো রোবট বা এআই করতে পারবে না। নার্স, বিজনেস কনসালট্যান্ট এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের চাকরি তাই কেউ খেতে পারবে না। কারণ এসব কাজ করতে গেলে অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হয় এবং সেই পারস্পরিক সম্পর্ক অনুযায়ীই কাজটি সমাধা হয়। এখনও এআই বা রোবটের এই সম্পর্ক তৈরির সক্ষমতা তৈরি হয়নি।
তৃতীয়ত, যেসব কাজে প্রচুর চলাফেরার প্রয়োজন হয়, যেসব চাকরিতে মানুষের হাতের কুশলতাই মূখ্য এবং যেগুলোতে মাথা খাটিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হয়, সেসব চাকরি খেতে পারবে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যেমন: ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, ওয়েল্ডার বা এ ধরনের কাজ করা মানুষ সহজে বেকার হবে না। আর এসব কাজকে অটোমেট করতে হলে সায়েন্স ফিকশনের রোবটকে বাস্তবে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু দিল্লি এখনও বহুত দূর!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই-এর হুমকি থেকে বাঁচতে মানুষকেও এখন থেকে পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। কাজের ধরনেও পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন, ক্যান্সার নির্ণয়ে মানুষের চেয়ে ভালো ফলাফল এনে দিতে পারবে এআই। সেটি এআই বা রোবটের ওপরে ছেড়ে দিলে ভালোই হবে। কিন্তু চিকিৎসা ও রোগীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে মানুষকেই থাকতে হবে। কারণ মানুষ এখনও রোবটের তুলনায় স্বজাতির ওপরই বেশি আস্থা রাখে। তাই মানুষের চাকরি আসলে মানুষই বাঁচিয়ে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু মানুষের কিছু চাকরি তো রোবট খাবেই। সেক্ষেত্রে কাদের চাকরি যাবে বেশি? বিশ্লেষকেরা বলছেন, হোয়াইট-কলার জব বা উচ্চপদস্থদের চাকরি যাওয়ার শঙ্কা তুলনামূলকভাবে বেশি! অর্থাৎ, চাকরিতে যারা যত বড় পদে, তাদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা ততো বেশি। কারণ এআই উবার চালাতে না পারলেও, অফিসের বিভিন্ন প্রতিবেদন লিখে দিতে পারবে ঠিকই! সুতরাং, সাধু সাবধান!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।