লাইফস্টাইল ডেস্ক : জগতের শ্রেষ্ঠসন্তান আলেম সমাজ। সাধারণ মানুষ আলেমদের অনুকরণ-অনুসরণকেই আখেরাতের মুক্তির পাথেয় মনে করে। আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহয় এত এত গুরুত্ব এসেছে যে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আলেমদের প্রতি মহব্বত রাখা সৌভাগ্য মনে করতে বাধ্য হয়েছে। আলেমদের মর্যাদা সম্পকে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘শুনে রাখ! যে ব্যক্তি জ্ঞান সংগ্রহে পথ চলে আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। কোনো জ্ঞানী যখন জমিনে পা রাখে ফেরেশতারা তাঁর সম্মানে নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেন। জ্ঞানীর জন্য প্রতিটি প্রাণী এমনকি সাগরের মাছ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করে। লক্ষ তারার চেয়ে চাঁদের আলো যেমন বেশি উজ্জ্বল, তেমনি ইবাদতে মগ্ন হাজারো ব্যক্তির চেয়ে একজন জ্ঞানী আল্লাহর কাছে অনেক বেশি দামি।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) আলেমদের চলার পথে ফেরেশতারা পাখা বিছিয়ে দেন জানতে চাইলে এক আল্লাহর অলি বলেন, খোদাতায়ালার সৃষ্ট রাজ্যে একমাত্র আলেমরাই রাজকীয় মেহমান। সুরা ফাতিরের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জেনে রাখ! আমার বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেম সমাজই আমাকে ভয় করে।’
সবকিছুরই একটি নির্দিষ্ট সীমানা থাকে। ইসলামেরও একটি সীমানা আছে। কর্মগত, চিন্তাগত সব বিধিবিধানের আছে সুস্পষ্ট চৌহদ্দি, সুনির্দিষ্ট অবকাঠামো। এর ভিতরে যা পড়ে তা ইসলাম, যা পড়ে না তা ইসলাম নয়। তো ইসলামি বিধিবিধানের এই সীমান্ত যাঁরা পাহারা দেন, যাঁরা ইসলামের মৌলিকত্ব টিকিয়ে রাখেন, তাঁরা হলেন আহলে এলেম। তাঁরা হলেন নবীদের ওয়ারিশ। ওহি প্রেরণ করার মাধ্যমে নবী-রসুলগণকে আল্লাহতায়ালা সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। নবী-রসুলগণের সেই ওহির এলেমের উত্তরাধিকারী হলেন আলেমগণ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দিনার বা দিরহামকে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যান না। বরং তাঁরা রেখে গিয়েছেন কেবল এলেম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বড় কিছু গ্রহণ করেছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৩৬৪১)
আলেমদের মর্যাদা বেশি হওয়ার কারণ হলো, তাঁদের কাছেই মানুষ লাভ করে কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান। চিনতে পারে প্রভুকে। মানুষ খুঁজে পায় নিজের আসল পরিচয়। শিখতে পারে আল্লাহর বিধিবিধান। জানতে পারে হালাল-হারাম। তাঁদের সংস্পর্শে এসেই অন্ধকার জগতের মানুষ সন্ধান পায় আলোকিত জীবনের। মৃত হৃদয়গুলো হয় পুনরুজ্জীবিত। দুনিয়ার ভোগবিলাসে উন্মত্ত মানুষ আখেরাতমুখী জীবনধারণ করে। তাঁরা পৃথিবীর জন্য রহমত। তাঁরা উম্মতের জন্য বরকত। পরমহিতৈষী ও মঙ্গলকামী। তাঁদের কাছে ইসলাম সবার আগে। আল্লাহতায়ালা আলেমদের বানিয়েছেন নিজ একত্ববাদের অন্যতম সাক্ষী হিসেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতারা এবং ন্যায়নিষ্ঠ আলেমরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮) কোরআনে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্যের সঙ্গেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আলেমদের আনুগত্য করার জন্যও। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, অনুসরণ কর রসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা কর্তৃত্বসম্পন্ন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও আলেম আছে তাঁদের।’ (সুরা নিসা, আয়াত ৫৯) যে কোনো শরয়ি সমস্যা নিরসনে তাঁদের দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা নিজেই। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘অতএব জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।’ (সুরা নাহল আয়াত ৪৩)
একজন আলেম দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে গেলে মানুষ যেমন দিশাহারা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি কোনো আলেম চলে গেলে পুরো দেশ ও সমাজ অচল হয়ে পড়ে। যেহেতু ওলামায়ে কেরাম না থাকলে দীনের চর্চা বন্ধ হয়ে যাবে, পৃথিবীর সব মানুষ মনুষ্যত্ব ভুলে চতুষ্পদ জন্তুতে পরিণত হবে, তাই আলেমকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। অন্যদিকে জ্ঞানীদের প্রতি অবজ্ঞা বা ধৃষ্টতা প্রদর্শন করলে, তাঁদের নিয়ে উপহাস বা ঠাট্টা করলে বা বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করলে এর পরিণতিও ভয়ংকর। যারা জ্ঞানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে, তাদের পরিণতি কোনো দিনই ভালো হয়নি। তাদের অপমান-অপদস্থ করার পরিণাম খুবই ভয়াবহ।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, ‘জ্ঞানীর গোশত বিষের মতো। যে শুঁকে সে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, আর যে খায় সে মারা যায়।’ যাঁদের আল্লাহ সম্মান দিয়েছেন, তাঁদের অসম্মান করলে আল্লাহ বরদাশত করেন না। এটা আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে নামার নামান্তর। এ জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব নাজিল হওয়ার ইতিহাস অনেক আছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, নিত্যনতুন রোগব্যাধি, বালামুসিবত, দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষ নাজিল করে আল্লাহ বহু জাতিকে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছেন কেবল জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকার কারণে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি চমৎকার হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৫০২)
মাও. হাফেজ আল আমিন সরকার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।