জুমবাংলা ডেস্ক : বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় আলোকিত চারিদিক। তবুও যেন থমথমে এক পরিবেশ। চারপাশে সজ্জিত কাচ দ্বারা আবদ্ধ বাক্স। প্রতিটি বাক্স যেন একেকটি ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করছে। এসব বাক্সের একটিতে তাঁকাতেই দৃষ্টি আটকে যায়। বাক্সটিতে তেমন কিই বা আছে! একটা টাই, প্যান্ট আর কোর্ট আর ডায়েরির মতো এক খাতায় লেখা থিসিস পেপার। তবুও যেন দৃষ্টি কেড়ে নেয় রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় অবস্থিত এ বাক্স।
বাক্সটি দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার মূল কারণ হল, বাংলাদেশের মানচিত্রে দাবানল লেখা সংবলিত একজন ব্যক্তির ছবি। তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহা।
‘ডোন্ট ফায়ার! আই সেইড, ডোন্ট ফায়ার! কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন আমার গায়ে গুলি লাগে’, ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের বাঁচাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাদের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে এমনই উচ্চারণ করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তৎকালীন প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। সত্যিই সেদিন ছাত্রদের গায়ে গুলি লাগার আগে ঝাঁঝরা হয়েছিল তার বুক।
ড. জোহার রক্ত ঝরার মধ্য দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। পতন ঘটে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও বেশি ভিত্তি দেয় ড. জোহার আত্মত্যাগ। এরপর গণআন্দোলনে বিজয় এসেছিল বাঙালির।
শহীদ ড. শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগের ৩৯ বছর পর ২০০৮ সালে রাষ্ট্র তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে এবং তার নামে একটি স্বারক ডাক টিকিট প্রকাশ করে। তবে এর বেশি সম্মান আর দেওয়া হয়নি শহীদ ড. জোহাকে।
ড. জোহার শাহাদতের পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ দিবসটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতিবছর এ দিনে তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দাবি জানালেও, দীর্ঘ ৫৫ বছরেও মেলেনি সেই স্বীকৃতি। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি যথাযথ জায়গায় বিষয়টি উপস্থাপনে নিজেদেরও ব্যর্থতা রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রামিম সিহাব বলেন, দেশের প্রতিজন শিক্ষক-ছাত্র-জনতার মাঝে আমাদের ড. জোহা স্যারের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত জোহা স্যারের এ শাহাদতকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং তার আত্মত্যাগের আদর্শ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, এ মুহূর্তে যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, অনৈতিকতার তথ্য সামনে উঠে আসছে, তখন ড. শামসুজ্জোহা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। শামসুজ্জোহার মৃত্যু দিবসকে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হলে এ বিশেষ দিনটিতে তাকে নিয়ে আলোচনা হবে, এতে শিক্ষকদের মাঝে সচেতনতা বাড়বে। এ ছাড়া তরুণদের মাঝে যারা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তারাও একটা আদর্শের জায়গা খুঁজে পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, এটা অনেক বড় একটি ঘটনা। সেই হিসেবে এ দিনটি শিক্ষক দিবস হওয়া জরুরি। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এই দাবিটি আদায় করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই মিলে গঠনমূলকভাবে ভাবা জরুরি। আমরা যদি প্রাথমিক বা মাধ্যমিকে ড. জোহাকে নিয়ে কোনো প্রবন্ধ পাঠ্যসূচিতে যুক্ত করতে পারি। তাহলে সচেতন সমাজ তাকে নিয়ে জানবে এবং আশা করি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ বিষয়ে জোরালো দাবি জানিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু সাবেক শিক্ষার্থী মহান সংসদে রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে আমরা অনেকবার অনুরোধ করেছি বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করার জন্য। বিষয়টি সংসদে তুললে, এটি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটবে। যেহেতু আমাদের একটি জাতীয় শিক্ষক দিবস রয়েছে, সেটি নিয়ে মহান সংসদে নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তারা আলোচনা করতে পারেন। ড. জোহা স্যারের উৎসর্গটা ছোট না। তিনি আমাদের দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য, তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীও বটে। আমরা উনার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।