জুমবাংলা ডেস্ক : পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওর। এই হাওরের পশ্চিম প্রান্তে ফতেহপুর ইউপির এক নিভৃত পল্লী ‘জলের গ্রাম নামে পরিচিত অন্তেহরি। হাওরপাড়ের এই গ্রাম যেন জলের ওপর দাঁড়িয়ে সবুজের হাতছানি দেয়। নামে রূপে গ্রামখানি প্রশান্তির এক আদর্শ স্থান।
কাউয়াদিঘি হাওরের কোল ঘেঁষে জলের ও সবুজের গ্রাম অন্তেহরি। হিজল-করচ-তমালের বন এই গ্রামটিকে করেছে অপরূপ অনন্য। বর্ষায় শাপলা-শালুক মুগ্ধতা ছড়ায়। শীতে সবুজের রাজ্যে পাখিদের নিরাপদ শান্তির নীড়। এ বছর বর্ষায় কাওয়াদিঘি হাওরে রয়েছে প্রচুর পানি। গত চার-পাঁচ বছরে এমন পানি হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
‘বর্ষায় নাও হেমন্তে পাও’ এই অঞ্চলে এ গ্রামের জন্য প্রচলিত কথা। অর্থাৎ অন্তেহরি গ্রামে বর্ষায় যাতায়াতের প্রধান ভরসা নৌকা। শীত মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলতে হয় গ্রামের মানুষদের। বর্ষায় হাওরের বুকে থাকে থইথই জল কিংবা জলের উপর একটুকরো সবুজের হাতছানি। শাপলা-শালুক অথবা নাম না জানা বাহারী ফুল ভাসে জলে।
স্থানীয়রা জানান, এ সময় গ্রামের বাড়িগুলো দেখলে মনে হয় পানির উপর ভেসে আছে। শীত মৌসুমে তার বিপরীত। শীতে এক একটি বাড়ি মনে হবে টিলার উপর দাঁড়িয়ে আছে। হাওরের বাড়িঘর খুব সহজে পানিতে নিমজ্জিত হয়, ফলে বাড়িগুলো অনেক উচুতে নির্মাণ করতে হয়। প্রতিটি বাড়ির চারিদিকে দেখা মিলবে বিভিন্ন জাতের গাছগাছালি। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে হিজল-তমাল-করচ। এগাছগুলো বর্ষায় হাওরের ঢেউ থেকে বাড়িগুলোকে রক্ষা করে, এবং সারাবছর দেশীয় পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল।
রাজনগরের ফতেহপুর ইউনিয়নের অন্তেহরি গ্রামটি কাউয়াদিঘি হাওরকে কেন্দ্র করে লোকবসতি গড়ে উঠেছে। এই গ্রামটি বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ ধারণ করে যখন হাওর পানিতে পরিপুর্ণ থাকে। আর তখনই অন্তেহরি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ালে এই জলের গ্রামের নান্দনিক রূপ চোখে ধরা পড়ে বলে জানান স্থানীয় পর্যটকরা।
জলের গ্রামে ঘুরতে আসা সুদীপ্তা দেব বলেন, আমি হবিগঞ্জের বাসিন্দা এই জলের গ্রামের সৌন্দর্যের অনেক বর্ণনা শুনেছি। এই প্রথম দেখতে আসলাম, এসে আমি মুগ্ধ।
আরেক পর্যটক সুমেল আহমদ জানান, এখানকার সবকিছু আমার ভালো লাগে। সুবিশাল হাওর, হাওর তীরের গ্রাম, নৌকায় মানুষের যাতায়াত, হাওরে মাছ ধরার দৃশ্য। হাওর ও হাওর পাড়ের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন একদিকে কষ্টের হলেও অন্যদিকে আনন্দেরও। আমি মুগ্ধ হই, এজন্য এখানে ফিরে আসি বারবার।
অন্তেহরি গ্রামের বাসিন্দা তাপস দাশ বলেন, এই গ্রামটির অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। হাওরে সাধারণত একটি ফসল হয় বোরো ফসল। এই ফসলের উপর নির্ভর করে সারা বছর চলতে হয়। খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব মৌলিক চাহিদা ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি এই ফসলের আয় থেকে চলে। পাশাপাশি যে সময় যে কাজ পান সেগুলোও করে জীবন ধারণ করেন। কেউ কেউ বর্ষা মৌসুমে হাওরে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে চাহিদা পূরণ করেন।’
ফতেপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ জানান, এখানে ছোট ছোট নৌকার পাশাপাশি উন্নত মানের অনেকগুলো নৌকা আছে। এখানে নানা ধরনের শাপলা ফুটে, বর্তমানে কচুরিপানা শাপলা ফুটতে সমস্যা করে, এজন্য কচুরিপানা অপসারণ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।