বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে বছরে কমপক্ষে ৩০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নত দেশগুলো। এবারের সম্মেলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এটিকে। দুই সপ্তাহ আলোচনার পর কপ-২৯-এ প্রতিনিধি দলগুলো এই বার্ষিক অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে একমত হয়েছে।
আজারবাইজানের বাকু শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি সামগ্রিক লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে অন্তত ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন করা হবে।
এ সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা ছিল ২২ নভেম্বর। কিন্তু জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে বাদানুবাদের কারণে সম্মেলন শেষ হতে সময় লেগেছে অতিরিক্ত ৩৩ ঘণ্টা। সে কারণে গত সম্মেলেন শেষ হয় গত ২৪ নভেম্বর।
এর আগে, ২০০৯ সালের সম্মেলনে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এই চুক্তি শেষ হবে চলতি বছর। তাই নতুন চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছর থেকে ৩০০ ডলার অনুদান পাবে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো।
২৪ নভেম্বর চুক্তিতে কিছু পরিবর্তনের পর অংশ নেওয়া দেশগুলো চুক্তি অনুমোদন করে। তখন সদস্যরাষ্ট্রগুলো উল্লাস ও করতালির মাধ্যমে এ চুক্তিকে স্বাগত জানায়। তবে এই চুক্তিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি নিয়ে হতাশা রয়ে গেছে।
সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর অভিযোগ, এই চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়ে আলোচনা খুব দুর্বল। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত ২০২৫ সালের জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনার জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
৩০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘কপ-২৯-এ এমন একটি চুক্তি হওয়া দরকার ছিল, যাতে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির ওপরে না ওঠে।’ তবে এমন কোনো চুক্তি হয়নি। তা ছাড়া জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্পবিপ্লবের পর এ বছরের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির বেশি গেছে। ফলে এবারের সম্মেলনকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন উন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ‘ত্রুটিপূর্ণ আপস’ হিসেবে।
আগেই বলেছি, এবারের জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে আজারবাইজানের বাকু শহরে। আজারবাইজান পুরোপুরি একটি জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ। ভূরাজনৈতিক কারণে এবার তারা জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে। আয়োজক শহর বাকুর কাছেই একটি স্টেডিয়ামে সাজানো হয়েছে কপ-২৯–এর ভেন্যু।
এই শহরে ২০-৩০ লাখ মানুষের থাকার জায়গা পুনর্নির্মাণ করেছে শহর কর্তৃপক্ষ। পুরো কাজটি করা হয়েছে তেল বিক্রির টাকা দিয়ে। এ শহরে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি। সেখানে শহরের আশপাশের রাস্তাগুলোকে রেসট্র্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এই স্টেডিয়ামের কাছেই তেল উত্তোলন খনি থেকে সারাক্ষণ তেল উত্তোলন করা হয়। এক মাইলেরও কম দূরের একটি তেল শোধনাগার প্রতিনিয়ত মিথেন পোড়ায়। মিথেন সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর একটি। আজারবাইজান কাসপিয়ান সাগরের তীরবর্তী অসংখ্য তেল খনি থেকে সারাক্ষণ তেল তোলে। এমন এক দেশে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন গ্রেটা থুনবার্গসহ সব জলবায়ু কর্মী। সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায় গ্রেটা বলেছেন, এটি ‘গ্রিনওয়াশ সম্মেলন’।
চলতি বছরের সম্মেলনের একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এই বছর প্রায় নিশ্চিতভাবে (যেহেতু বছর এখনো শেষ হয়নি) সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে যাচ্ছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং প্রাণঘাতী ঝড়ের কবলে পড়েছে বিশ্ব। গত বছরও ছিল এক লাখ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর।
২০২৪ সালে এই রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে প্রায় নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমানে গ্রিনহাউস গ্যাসের স্তর রেকর্ড পর্যায়ে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। হিমবাহ গলে যাওয়ার হারও আশঙ্কাজনক। বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোয় বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটেছে।
এবারের সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে আলোচিত বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি ট্রাম্প সন্দেহপ্রবণ। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি থেকে সরিয়ে নেবেন। প্যারিস সম্মেলনে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য একটি রোডম্যাপ বানিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি বা রোডম্যাপ থেকে সরে গেলে তা বড় সমস্যা হয়ে উঠবে। উন্নত দেশগুলো এ বিষয়ে খুব সচেতন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জলবায়ু তহবিলে এক পয়সাও দেবেন না। ফলে যে ঘাটতি তৈরি হবে, উন্নত দেশগুলোকে তা পূরণ করতে হবে। এর ফলে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে।
জলবায়ু সম্মেলনে প্রতিবারের মতো এবারো জলবায়ু কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার শেষ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে এবার জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার চুক্তির ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুখবর নেই। আশা করা যায়, আগামী বছরের সম্মেলনে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
২০২৫ সালে ব্রাজিলের বেলেম শহর কপ-৩০ অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলন নিয়ে দেশগুলো আশাবাদী। কারণ, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমাজন রেইনফরেস্টের বন উজাড় কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।