লাইফস্টাইল ডেস্ক : জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ভাবছেন খুব ভালো জমি। দরদামও আয়ত্তের মধ্যে। কিন্তু জমি কেনার ক্ষেত্রে শুধু দলিল সম্পাদন করে নিলেই কি হলো। ব্যপারটি মোটেও তেমন নয়। কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন না করে তড়িঘড়ি করে কিনতে গিয়ে বিপদেও পড়তে পারেন।
জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির মালিকের মালিকানা বৈধতা ভালো করে যাচাই করতে হবে। এছাড়া জমির ক্রেতাকে জমির বিভিন্ন দলিল বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় জমি কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হতে হবে। কিংবা জমির মূল অংশ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। মালিকানা যাচাই না করে জমি কিনলে ভবিষ্যতে মামলা-মোকদ্দমায়ও জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও থাকে। মাঝেমধ্যে দেখা যায় একজনের নাম করা জমি অন্য একজন ভুয়া দলিল দেখিয়ে বিক্রি করেছেন। পরে আসল মালিক ক্রেতাকে জড়িয়েও মামলা ঠুকে দেন।
বিক্রয় দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর খতিয়ান সবই হচ্ছে দলিল। এছাড়া একটি জমির আরও বিভিন্ন ধরনের দলিল থাকতে পারে। বিক্রেতাকে প্রথমেই দেখতে হবে সবশেষে যে দলিল করা হয়েছে, তার সঙ্গে আগের দলিলগুলোর মিল আছে কি না। এছাড়া জমির দলিলের সাথে খতিয়ানে দেয়া তথ্যের কোনো অসংগতি আছে কিনা সেটিও মিলিয়ে দেখতে হবে।বিশেষ করে, ভায়া দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, দেখতে হবে। ভায়া দলিল হচ্ছে মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়।
ধরা যাক, আপনি কিছু জমি ১৯৯০ সালে ৫৪০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে কেনেন। সেই জমি ২০২৩ সালে অন্য একজনের কাছে ৬২০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রি করলেন। তাহলে আগের ৫৪০ নম্বর দলিলটি হচ্ছে ভায়া দলিল।
জমি ক্রয়ের আগে হস্তান্তর করা দলিলে দাতা এবং গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, মৌজার নাম, খতিয়ান নম্বর, জোত নম্বর, দাগ নম্বর, মোট জমির পরিমাণ ভালো করে দেখতে হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে, যে ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে, তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ সঠিক ভাবে উল্লেখ আছে কিনা। খতিয়ানের ক্ষেত্রে আগের খতিয়ানগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ খতিয়ানের মিল আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখতে হবে। খতিয়ানে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনা পড়তে হয় নাম নিয়ে। সুতরাং জমির প্রত্যেক অংশীদারের নাম সঠিকভাবে লেখা আছে কিনা তা অবশ্যই দেখতে হবে।
মিউটেশন বা নামজারির মাধ্যমে যে খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে, সে মতো খতিয়ানে দাগের মোট জমির পরিমাণ এবং দাগের অবশিষ্ট পরিমাণ যোগ করতে হবে। এই যোগফল কোনো দাগে মোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার চেয়ে কম না বেশি, তা দেখা দরকার। যদি বেশি হয়, তবে অতিরিক্ত জমির মালিকানা কোনোভাবেই দাবি করা যাবে না। দেখতে হবে মিউটেশন বা নামজারি করা হয়েছে কি না এবং নামজারি যদি না হয় তাহলে কী কারণে হলো না তা জানতে হবে।
দাগ নম্বরে সর্বমোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার সঙ্গে আগের দলিলগুলোর মিল আছে কি না তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। জমি যার কাছ থেকে কিনবেন তিনি কীভাবে জমির মালিক হয়েছেন, তা দেখতে হবে।
ক্রয়সূত্রে, ওয়ারিশমূলে, দান বা হেবামূলে যেকোনো উপায়েই হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপযুক্ত দলিল যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে যদি কেউ কোনো জমি বিক্রি করতে চান তাহলেও মূল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা বাঞ্ছনীয়। এছাড়া তার স্ত্রীর কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।
জমি কেনার ক্ষেত্রে সেটা সরকারি মালিকানা বা অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত কি না, অবশ্যই সেটি যাচাই করে নিতে হবে। অনেক সময় ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল তৈরি করে জমি বিক্রির ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
জমির মালিকানা যাচাই না করে জমি কেনা বোকামি। এক্ষেত্রে জমি ক্রয়ে বিলম্ব হলেও যাচাই-বাছাই সঠিকভাবে করতে হবে। অনেক সময় জমিজমা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলাকালে প্রকৃত তথ্য গোপন করেও অনেকে জমি বিক্রি করে দেন। তাই মালিকানা-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি জেনে নেওয়া আবশ্যক।
আশপাশের লোকজনদের কাছ থেকে জমি নিয়ে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। পার্শ্ববর্তী জমির মালিক অগ্রক্রয়ের দাবিদার কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। কোনোভাবে জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ বা মধ্যস্থতাকারীকে শতভাগ বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কতদূর? জানলে অবাক হবেন
মালিকানা-সংক্রান্ত একটু জটিলতা সারা জীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ক্রেতার নিজেকেই মালিকানা-সংক্রান্ত বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে কিংবা যাচাই-বাছাই করে জমি কিনতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।