জুমবাংলা ডেস্ক : সারাদেশে ভূমির ডিজিটাল জরিপ হওয়ার পর পরিমাণে গড়মিল পেলে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ম্যাপ দেখেই আপত্তি জানানো যাবে বলে জানিয়েছেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার ১৪টি উপজেলায় বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে – বিডিএস) উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন।
বুধবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয় সংলগ্ন মাঠে এ জরিপের পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
প্রচলিত ভূমি জরিপে যেখানে ২০ থেকে ২৫ বছর লাগে, সেখানে খুব অল্প সময়ে ডিজিটাল জরিপ সম্ভব হবে জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, “এই জরিপ শুরুর সাথে সাথে খসড়া ম্যাপ তৈরি করে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।
“যাতে জমির মালিক পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে তার জমির ম্যাপ দেখে জমির পরিমাণ কমবেশি হলে সাথে সাথে আপত্তি দাখিল করতে পারেন।”
তিনি আশা করেন, ডিজিটাল জরিপে যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল ও নির্ভুল হওয়ায়, জরিপে স্বচ্ছতা আসবে, মামলা মোকদ্দমা কমে আসবে, সেইসঙ্গে জনগণের ভোগান্তিও কমে আসবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সর্বাধুনিক ফোর্থ জেনারেশন সার্ভে ড্রোনের মাধ্যমে ডিজিটাল জরিপের পাইলটিং পটুয়াখালী থেকে শুরু হচ্ছে।
পটুয়াখালী ও বরগুনায় এসএ জরিপের পর আরএস জরিপ না হওয়ায় দুই জেলার ১৪ উপজেলাকে বিডিএস এর জন্য বাছাই করা হয়। পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে শুরু হবে এ জরিপ।
ভূমিমন্ত্রী জানান, অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ইমেজ কিনে সেটা মৌজা ম্যাপের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে।
এর ফলে কৃষিজমি, জলাভূমি, পাহাড় ও বনভূমি রক্ষাসহ জমির পরিকল্পিত ব্যবহার করাও সম্ভব হবে। ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
এনআইডি ইন্টিগ্রেশন থাকায় জমির মালিকানা, শ্রেণি ও ধরন বিষয়ে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে উঠবে। যা দিয়ে উপজেলা, জেলা, বিভাগভিত্তিক জাতীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, “বিডিএস একবার ঠিকভাবে করা সম্ভব হলে পুনরায় মাঠ জরিপ করার প্রয়োজন হবে না। কারণ জমি হস্তান্তর হলে এসিল্যান্ড প্রয়োজনীয় ডেটা ইনপুট দিয়ে নিজেই ম্যাপ পার্টিশন করে নিতে পারবেন
“ম্যাপে সুনির্দিষ্ট দাগে ক্লিক করে ঐ দাগের জমির মালিকানা, জমির পরিমাণ, চৌহদ্দি ও শ্রেণিসহ অন্যান্য তথ্য পাওয়া যাবে।
বিডিএস পাইলটিং-এর ম্যাপ তৈরির জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবার ডিজিটাল ভূমি জরিপ কাজে সক্ষম বেসরকারি প্রতিষ্ঠাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান।
তিনি বলেন, “তবে জরিপের খতিয়ান প্রস্তুত এবং মালিকানা নির্ণয় পর্যায়ের কাজ সরকারিভাবেই করা হবে।”
এই পাইলটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে দেশের বাকি জেলায় একযোগে জরিপ শুরু করার পরিকল্পনা করা হবে এবং বিডিএস-এর শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিডিএস ম্যাপে জমির পরিমাণ, জমির আইলের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, আকার সম্পর্কে জানা যাবে। এই জরিপে তৈরি ম্যাপটিতে সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভূমি পরিমাপের নির্ভুলতা থাকবে।
ডিজিটাল জরিপ বিষয়ে ১৯৫৫ সনের প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ৩০ বিধিতে আপত্তি এবং ৩১ বিধিতে অনলাইনে আবেদন করার পাশাপাশি শুনানি নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সচিব বলেন, “সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জমি, খাস জমি, রাস্তাঘাট, জলাধার, নদী-খাল চিহ্নিত করা হবে, ফলে জমি দলিল ও নামজারি করার সময় জালিয়াতি করে সরকারি জমি আত্মসাৎ বন্ধ করা সম্ভব হবে।”
এই জরিপ শেষ হলে অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দাগভিত্তিক প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ জেনে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও প্রদান এবং জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২১২ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভের উদ্যোগ নিয়েছে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ‘ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প’ নামে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পের মাধ্যমে এই জরিপ কার্যক্রম চালানো হবে।
কম সময়ে, নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের জন্য ডিজিটাল জরিপে স্যাটেলাইট, ড্রোন তথা ইউএভি এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের সমন্বয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
এজন্য তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া সারাদেশের ৪৭০টি উপজেলার মৌজা পর্যায়ে জিওডেটিক সার্ভের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১০টি জিও-রেফারেন্সিং পয়েন্ট নির্ধারণ করা হবে।
এছাড়া একলাখ ৩৩ হাজার ১৮৮টি মৌজা ম্যাপের ডেটাবেজ প্রস্তুত করা হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভের মূল উদ্দেশ্য অল্প সময়ে সমগ্র বাংলাদেশে ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে তথা ভূ-সম্পদ জরিপ শেষ করা এবং পরবর্তীতে মাঠে গিয়ে জরিপের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে নিয়ে আসা।
এছাড়া কোনো এলাকায় প্রাকৃতিক কারণে বড় ধরণের ভূমির বিচ্যুতি না ঘটলে রিভিশনাল সার্ভের প্রয়োজনীয়তাও থাকবে না ডিজিটাল ম্যাপ পার্টিশনের সুবিধার জন্য।
এ প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত জিও-রেফারেন্সকৃত মৌজা ম্যাপ ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। জমি বিক্রির পর নামজারি খতিয়ান পরিবর্তনের সাথে সাথে ম্যাপের সীমানা পরিবর্তন হয়ে যাবে।
পরিমাপের ক্ষেত্রে ইমেজ থেকে সুবিধা মতো রেফারেন্সের কো-অর্ডিনেটের মান ও মৌজা ম্যাপের যে কোনো প্লটের দূরত্বের মাপ ও প্লটের খতিয়ান নির্ধারিত দৈর্ঘ্যপ্রস্থ মাপ ও চার কোনার চারটি কো-অর্ডিনেট মান নিয়ে কনভেনশনাল ও আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমির যে কোনো প্লটের পরিমাপ, ল্যান্ড ডিমার্কেশন, ল্যান্ড ডিভাইডেড করা সম্ভব হবে।
এজন্য আলাদাভাবে স্থাপিত কোনো রেফারেন্স জিওডেটিক পিলার তথা জরিপের জন্য পিলার স্থাপনের দরকার হবে না বলে জানায় ভূমি মন্ত্রণালয়।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র জোরদার হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।