জুমবাংলা ডেস্ক : রাজস্ব আদায়ে হোঁচট খাওয়ার পর এবার জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে উৎসে কর কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে উৎসে কর দ্বিগুণ করেছে। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে আগ্রহ কমে গেছে ক্রেতাদের। শুধু ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়ই জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। ফলে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ও প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। তবে গবেষণা ছাড়া করহার দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকেরা।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়ায় এনবিআর এ খাতে উৎসে কর পুনরায় সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে উৎসে কর আবার আগের মতো হতে পারে।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জমির নিবন্ধন খরচ বাড়ায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে কেনাবেচা। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। অথচ রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্যই উৎসে কর বাড়ানো হয়েছিল। তাই এ খাতে উৎসে কর কমানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এটা আগের হারে ফিরতে পারে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহসভাপতি কামাল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উৎসে কর বাড়ানোয় নিবন্ধন খরচ বেড়ে গেছে। এখন ফ্ল্যাট নিবন্ধন ও হস্তান্তরে ধস নেমেছে। এনবিআর যখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখনই আমরা বলেছিলাম এতে রাজস্ব আদায় কমবে।’
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ইনফরমাল ইকোনমি এখনো অনেক বড়। কারণ মানুষ করনেটের আওতায় আসতে চায় না। এই অবস্থায় যদি করহার বাড়ানো হয় তাহলে যারা জমি-ফ্ল্যাটের লেনদেনে ফরমাল ইকোনমির মাধ্যমে করনেটে আছে কিংবা করনেটে আসতে চায়; তারা আরও নিরুৎসাহিত হবে। এ ক্ষেত্রে প্রমাণিত হলো, করহার বাড়ালেই কর আদায় বাড়ে না; রবং তা আরও কমে যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, উৎসে কর বাড়ানোর আগেই এটা নিয়ে গবেষণা করলে এনবিআর বুঝতে পারত, অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় এমনিতেই ফ্ল্যাট কেনাবেচা কমে যেতে পারে, কর বাড়ালে এটা আরও কমবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ও তার আশপাশের ১৭টি কার্যালয়ে জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধন করা হয়। এসব কার্যালয়ে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের সময় উৎসে কর কেটে রাখা হয়। এনবিআর ওই ১৭টি কার্যালয় থেকে করের হিসাব নিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে মাত্র ৩২ কোটি টাকা নিবন্ধন কর পাওয়া গেছে। অথচ ২০২২ সালের জুলাই মাসে এর পরিমাণ ছিল ১০১ কোটি টাকা। আগস্ট মাসেও একই ধারা অব্যাহত থাকে। আগস্টের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ২৪ দিনে ৭৬ কোটি টাকা এসেছে। গত বছর আগস্টে সব মিলিয়ে ১২৬ কোটি টাকা কর পেয়েছিল এনবিআর।
সূত্রমতে, চলতি বছর নিবন্ধনে উৎসে কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ১ মাস ২৪ দিনে আদায় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২ শতাংশ।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করহার বাড়ালেই কর আদায় বাড়ে না। ধরা যাক, একটি খাতে করহার ১০ শতাংশ, সেখান থেকে আপনি ১০০ কোটি টাকা পান। এখন যদি সেটা ২০ শতাংশ করে আপনি ভাবেন সেখান থেকে ২০০ কোটি টাকা পাবেন, তাহলে সেটা আপনার ভুল ধারণা। এই ভুল ধারণাবশত এনবিআর এটা করেছে। কোনো গবেষণা না করেই করহার দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়েছে। রাতারাতি ১০০ শতাংশ বাড়ানো সঠিক হয়নি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।