আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আকাশ ও স্থলপথে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলার মুখে ইসরায়েল সীমান্তে সেনা উপস্থিতি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে জর্ডান। একই সঙ্গে জর্ডান নদীর ওপারে ফিলিস্তিনিদের জোর করে ঠেলে দেওয়ার বিষয়েও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে দেশটি। এদিকে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর ফের গাজায় অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে নিজেদের সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর কথা জানিয়েছে জর্ডান। একই সঙ্গে মঙ্গলবার দেশটি সতর্ক করে বলেছে, জর্ডান নদীর ওপারে ফিলিস্তিনিদের জোর করে ঠেলে দেওয়ার যে কোনো ইসরায়েলি চেষ্টা বিদ্যমান শান্তি চুক্তির লঙ্ঘন করবে।
জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী বিশের খাসাওনেহ বলেছেন, পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপকভাবে বিতাড়নের বিষয়ে ইসরায়েলকে বাধা দিতে তার দেশ ‘নিজেদের সক্ষমতার সব উপায়’ ব্যবহার করবে। ইসরায়েল-গাজার মধ্যে চলমান সংঘাত জর্ডানের দীর্ঘদিনের শঙ্কাকে আলোড়িত করেছে। মূলত দেশটিতে বিশাল সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী এবং তাদের বংশধররা বাস করেন। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ১৭ লাখ মানুষই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৯৪ সালের শান্তি চুক্তির কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী খাসাওনেহ বলেন, ‘যে কোনো স্থানচ্যুতি বা সেই ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা হলে তা শরণার্থীর ঢেউ সৃষ্টির দিকেই পরিচালিত করবে। জর্ডান এটিকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসাবে বিবেচনা করবে এবং তাতে কার্যত শান্তিচুক্তি লঙ্ঘিত হবে।’
খাসাওনেহ আরো বলেন, এতে ফিলিস্তিনিদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে এবং জর্ডানের জাতীয় নিরাপত্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মিশরের পর দ্বিতীয় আরব দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল জর্ডান। এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে শক্তিশালী নিরাপত্তা সম্পর্কও রয়েছে দেশটির। কিন্তু ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি সরকারের আবির্ভাবের পর থেকে সেই সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে।
খাসাওনেহ বলেন, ‘ইসরায়েল যদি তার দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতাকে সম্মান না করে এবং চুক্তি লঙ্ঘন করেই চলে তবে শান্তিচুক্তিটি কেবল ধুলোয় পড়ে থাকা একটি কাগজের টুকরোতে পরিণত হবে। জর্ডানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যে কোনও হুমকি মোকাবিলায় ‘বিকল্প সকল উপায়ই উন্মুক্ত থাকবে’ উল্লেখ করে খাসাওনেহ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তে সেনা মোতায়েন দেশটির নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থার একটি অংশ।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা গত কয়েক দিনে পশ্চিম তীরের বিপরীতে জর্ডান উপত্যকায় যাওয়ার একটি প্রধান মহাসড়ক ধরে সাঁজোয়া যান ও ট্যাংকের বিশাল বহর দেখেছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এদিকে হামাসের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কবে থেকে শুরু হবে সে বিষয়ক কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না এলেও বিরতি শেষে গাজা উপত্যকায় ফের ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার রাজধানী জেরুজালেমে এক জরুরি বৈঠকে হামাসের চার দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন করে দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে এক বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা একটি যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি এবং যতদিন আমাদের লক্ষ্য পূরণ না হয়, ততদিন এই যুদ্ধ চলবে।’
গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নির্বিচারে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে তারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।
হামাসের এই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৪ হাজার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।