রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশে তীব্র এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে শুক্রবার (২১ নভেম্বর)। ৫ দশমিক ৭ মাত্রার কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই ভূমিকম্পে ঢাকা, নরসিংদী ও নারায়ণঞ্জে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ১০ জন। সেইসঙ্গে আহত হয়েছেন ৬ শতাধিক মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি স্থাপনাসহ হাজারো ভবন। শুধু তাই নয়, এই ভূমিকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার অনুভূত হয়েছে ‘আফটার শক’।

এর মধ্যে শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর মাত্র দুই সেকেন্ডে দুটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে রাজধানী ঢাকা ও নরসিংদীতে। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল বাড্ডা। এর এক সেকেন্ড পর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ৪ দশমিক ৩।
সব মিলিয়ে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় মোট চারবার ভূমিকম্প অনুভব করেছে দেশের মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনে বড় মাত্রার ভূমিকম্পেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে ছোট ও মাঝারি এই ভূমিকম্পগুলো। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তেমন ঝুঁকিতেই রয়েছে বাংলাদেশ। আর বড় ধরনের সেই ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা শহর। কারণ, এ শহরের বেশির ভাগ ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়নি। এছাড়া এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কমাতে তেমন ব্যবস্থা নেয়নি কোনো সরকার।
কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার জিওলজি ও ওশানোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. খালেকুজ্জামান জানান, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে একসঙ্গে ৭২ হাজার ভবন ধ্বস ও ব্যাপক প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এজন্য নিতে হবে ৪ ধাপের প্রস্তুতি। বাংলাদেশের ভবন নির্মাণ নীতিমালাকে আরও যুগোপযোগী এবং নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করা না গেলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের অপেক্ষা করতে হবে ঢাকাবাসীকে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের লক্ষ্যে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, মুগদা ও বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।
এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের লক্ষ্যে শনিবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, মুগদা ও বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আইসিসিতে যাওয়ার কথা ভাবছে সরকার : আসিফ নজরুল
পরিদর্শনকালে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এই ভূমিকম্প আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল। এর থেকে সতর্ক না হলে আমাদের জন্য বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে সিলগালা, বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ও কিছুক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণও করা হচ্ছে। সচেতন না হলে অদূর ভবিষ্যতে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে আমাদেরকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



