হাসিন আরমান : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী কর্তৃক এনটিভি প্রতিবেদককে দেওয়া ‘সাংবাদিকদের টাকা-মোবাইল দেয় শিক্ষকরা’ বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) এ বিষয়ে শিক্ষকদের মতামত জানতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন শিক্ষক এমন প্রতিক্রিয়া জানান।
তারা জানান, একজন উপাচার্য হয়ে কোনো ধরনের তথ্য প্রমাণ ব্যতীত এই ধরনের মন্তব্য তিনি করতে পারেন না। এই বক্তব্য শিক্ষকদের খুব মর্মাহত করেছে বলেও জানান তারা।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘উপাচার্য স্যার যে মন্তব্য করেছে সেটা উনার ব্যক্তিগত মন্তব্য। শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের মধ্যে এধরণের লেনদেন হয় কিনা আমার জানা নাই। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি উনার এ ধরণের মন্তব্য করা সমীচীন নয়।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং সহকারী প্রক্টর মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘মাননীয় উপাচার্য স্যারের বক্তব্যে উনি কিছু শিক্ষক এবং কিছু সাংবাদিকের কথা বলেছেন। উনার কাছে যদি এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ থাকে, তাহলে এই কথা বলার সুযোগ উনার আছে। আর যদি তথ্য প্রমাণ ছাড়া শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন তাহলে এই কথা বলা উনার ঠিক হয়নি।’
ইউট্যাবের সাধারণ সম্পাদক ও লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহীন উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম, এখন শিক্ষক হিসেবে আছি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। এ সময়ে ৪-৫ জন উপাচার্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। কিন্তু কাউকেই এমন অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করতে শুনিনি। এটি সাংবাদিকদের জন্য অপমানজনক। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যান। তাই প্রমাণ ছাড়া এমন মন্তব্য করা অপমানজনক ও এক ধরনের হুমকি।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, ‘নিউজে উপাচার্য স্যারের মন্তব্যটা পড়েছি, এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে এবং শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজন শব্দচয়ন করেছেন। উপাচার্য স্যারের এধরনের শব্দচয়ন আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। সাংবাদিকদের গঠনমূলক সমালোচনা ক্যাম্পাসের জন্য ইতিবাচক। ওনার এমন মন্তব্যে সাংবাদিকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।’
ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম. এম. শরিফুল করিম বলেন, ‘আমি সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে তিনি এমন কথা বলেছেন। যদি তিনি শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এমন কথা বলে থাকেন তাহলে বলবো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এমন মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনেও তাদের অবদান ছিল প্রশংসনীয়। এমন মন্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষক ও সাংবাদিক দুই পক্ষই অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। যদি সত্যিই এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে স্যার সেই তথ্য সামনে আনলে দোষীদের পরিচয় স্পষ্ট হবে।’
মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয় যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে তিনি কিছু শিক্ষক বলেছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অনেক শিক্ষক, সেক্ষেত্রে উনাকে এটা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে কারা আসলে এধরণের কাজ করেছে। আপনারা অপেক্ষা করেন এবং দেখেন উনি প্রমাণ দিতে পারেন কিনা। যদি প্রমাণ না দিতে পারে সেটাও আপনারা জানতে চাইবেন। সর্বোপরি, তথ্য প্রমাণ ছাড়া এধরণের মন্তব্য করা অপ্রাসঙ্গিক।’
উল্লেখ্য, গত ২১ অক্টোবর ভিন্ন সংবাদের প্রসঙ্গে এক বক্তব্য নিতে গেলে মুঠোফোনে তিনি এই কথা বলেন। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি এখানে দেখেছি কিছু শিক্ষক জঘন্যভাবে সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে। আপনাদের টাকা পয়সাও দেয় শুনেছি, মোবাইল-টোবাইলও কিনে দেয় শুনেছি।’
এছাড়া, এর আগে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় তাদেরকে সিরিয়াল অনুযায়ী না ডাকার প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বরতরা কথা বলতে গেলে এক পর্যায়ে উপাচার্য মন্তব্য করেন, ‘তিনি সংগঠনগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার মনে করেন না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



