বিনোদন ডেস্ক: কমলাপুর স্টেশনে ৯ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে একটা মাঝারি সাইজের ট্রেন। পুরোদস্তুর লোকাল। এ ট্রেনের দৌড় নারায়ণগঞ্জ অবধি। ছাড়ার সময় সকাল ঠিক ১০টা ৫০ মিনিট। কিন্তু আজ ৫ মিনিট দেরীতে ছাড়া হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘লেট’ এ চলা ট্রেনের রীতির কাছে এই ৫ মিনিট তো নস্যি। অবশ্য আগেই জানা গেছে, এই ট্রেনেরই একটা বগিতে আসন নিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর প্রতিবেদক হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
খুঁজতে হবে। কিন্তু এই মাঝারি মানের ট্রেনের কোন বগিতে উঠেছেন এই অভিনেত্রী কে জানে! তাও আবার এক বগি থেকে আরেক বগিতে যাওয়ার উপায় নেই।
কিন্তু বেগ পেতে হলো না একদমই। বৈশাখের তীব্র গরমে খোঁজার হাঁসফাঁস থেকে মুক্তি দিলো উৎসুক জনতা। জয়া আহসান যেখানে, সেখানে জনতা সমেত সেলফি তোলার হিড়িক থাকবে না তা কি হয় ! সেটা হোক ঢাকা, কলকাতা কিংবা ইরান!
যারা ইরান শুনে একটু ভড়কে গেছেন তাদের জন্য বলে রাখি, জয়া আহসান কে পেলে ইরানের দর্শক হয়ত এখনই ভিড় করবে না কিন্তু অল্প কিছুদিন পরে যে করবে না তা আপনি হলফ করে বলতে পারেন না।
কারণ গত ২৪ মার্চ, রোজ রবিবার জয়া আহসান যে ছবির শুটিং করতে এমন একটা লোকাল ট্রেনে চেপে বসেছেন সেই চলচ্চিত্রটি একটি ইরানি চলচ্চিত্র। নাম ‘ফেরেশতে’। ছবির পরিচালক ইরানি। এমনকি ইউনিটের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সবাই ইরানি। তাহলে ‘ফেরেশতে’ ছবির ভাষা? সেটা অবশ্য আপাতত বাংলা।
কিন্তু ইরানে মুক্তির সময় ওই দেশের ফার্সি ভাষায় ডাবিং করা হবে! বাংলাদেশ ও ইরানের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে ছবিটি। মুক্তিও পাবে দুই দেশে। এতদিন ইরানি ছবি বাংলায় ডাবিং করে দেখেছেন। এবার আমাদের অভিনয়শিল্পীদের ছবি ফার্সিতে ডাবিং করে দেখবেন ইরানি দর্শক।
আর এই ফেরেশতে ছবির দৃশ্যধারণ করতেই এমন লোকাল ট্রেনে চেপে বসেছেন খোদ ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম।
ততক্ষণে ট্রেনে উঠে বসেছেন জয়া আহসান। তার সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে আছেন নিকিতা নন্দীনি শিমু ও সুমন ফারুক।
ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই ট্রেনে ওঠার দৃশ্য শেষ করা হয়েছে। তাই শুটিংয়ের বাক্সপেটরাসহ পুরো ইউনিট সওয়ার হয়েছেন ট্রেনের একটা বগিতে। বগির এক পাশে বসেছেন জয়াসহ বাকি অভিনয়শিল্পীরা।
জয়ার পরনে অতি সাধারণ পোশাক। তেমন মেকআপ নেই। আটপৌরে জয়াকে চেনার জন্য ঘুরে তাকাতে হয়। সঙ্গের অভিনয়শিল্পীরাও তাই। ট্রেনের অন্য যাত্রীদের থেকে আলাদা করার উপায় নেই তাদের।
ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। এবার বগির ভেতরে বসার দৃশ্য ধারণ করা হবে।
ক্যামেরা প্রস্তুত করতে বললেন জমজম। তবে জমজমের কথাবার্তা সব ফার্সিতে। পুরো ইউনিটের এই ভাষা বুঝতে রাখতে হয়েছে অনুবাদক। ছবির পাত্রপাত্রীদের এই ভাষা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
পরিচালকের কথামতো বগির এক পাশে ক্যামেরা প্রস্তুত করা হলো। জয়া আহসান, নিকিতা নন্দীনি শিমু ও সুমন ফারুক বগির আরেক প্রান্ত থেকে হেঁটে বগির মাঝ বরাবর এসে নির্দিষ্ট আসনে বসবেন। সবকিছু যখন প্রস্তুত তখন এই তিনজনের সঙ্গে দেয়া হলো আরেক সহযাত্রীকে। তিনিও এই ছবির গুরুত্বপূর্ণ অভিনয়শিল্পী। তার নাম সাথী। বয়স ৪ বছর। শুধু এই দৃশ্যই নয়, পুরো ছবি জুড়ে তার অবাধ বিচরণ বলে জানালেন ছবিটির পরামর্শক ও উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুমিত আল রশীদ।
এতক্ষণ সাথী ছিল মায়ের কোলে। এবার যুক্ত হলেন অভিনয়শিল্পীদের কাতারে।
শট শুরু হয়। বেশ কয়েকবার শট নেয়ার পর পরিচালকের মনঃপুত হয়। ট্রেন পার হয়েছে দুটি স্টেশন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে নারায়ণগঞ্জ।
ছবির দৃশ্যে হঠাৎ পাওয়া আরেক অভিনেতা যুক্ত হয়ে যায়। অবশ্য অভিনেতা না বলে গায়ক বলাই ভালো। ট্রেনের গায়ক মোঃ রুবেল। নিয়মিত ‘নারায়ণগঞ্জ লোকাল’ নামের এই ট্রেনে গান গেয়ে শোনায় যাত্রীদের। রুবেল ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে উঠে পড়েছে এই বগিতে। তাই বগিতে তার গান গাওয়ার দৃশ্যটাও ধারণ করা হবে। বসতে বসতে যার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন জয়াসহ অন্যরা। নতুন করে শুরু হয় আবার।
ট্রেন চলছে। এই দৃশ্য ধারণ করতে করতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ট্রেন পৌঁছে যায় নারায়ণগঞ্জ। এবার খানিকটা বিরতি। প্রচন্ড গরমে ইউনিটের সবাই ক্লান্ত।
বিশ্রাম শেষে এবার ঢাকার ফেরার পালা। নারায়ণগঞ্জ থেকে এটি ছাড়বে বেলা ১২.০৫ মিনিটে। ছাড়লেই আবার দৃশ্য ধারণ শুরু হবে।
এবার বগিতে বসার পর নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলবেন জয়াসহ অন্যরা। ট্রেন ছাড়ে। একই কায়দায় শুরু হয় দৃশ্য ধারণ। এক ফাঁকে কথা হয় জয়া আহসানের সঙ্গে।
বললেন, “কতদিন পর দেশের ভেতরে এমন লোকাল ট্রেনে উঠলাম মনে করতে পারছি না। গরমে কষ্ট হলেও পুরো জার্নিটা খুব উপভোগ করেছি। একটা ভালো ছবির জন্য এইটুকু আমরা সবাই মিলে করতেই পারি।”
তিনি জানান, শীঘ্রই শেষ হবে ইরানি এই ছবির শুটিং। তারপরই মুক্তি দেয়া হবে দুই দেশে।
শুটিং শেষ করে পরিচালক জমজম বলেন, “আমি নানা দেশে গিয়ে ওই দেশের কৃষ্টি কালচার নিয়ে ছবি নির্মাণ করি। এটাও সেরকম একটা ছবি। আমি পুরো বাংলাদেশের নানা সংস্কৃতি নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করছি। এটা বাংলাদেশের দর্শকদের যেমন ভালো লাগবে তেমনি ইরানের দর্শকদেরও ভালো লাগবে।”
এই ভালোলাগাটা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য সামনে বাংলাদেশে আরও কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ দেখান এই পরিচালক।
ট্রেন এসে থেমেছে কমলাপুর। আপাতত ইরানি ছ্বির জন্য ট্রেন যাত্রা শেষ হয় জয়া আহসান আর সবার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।