জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কাগজে-কলমে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হলেও বৈশিষ্ট্য হারিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। কয়েক দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষাথীদের ঠাঁই হতো গণরুমে আর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের থাকতে হতো মিনি গণরুমে। তবে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৪২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যায়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হয় দশতলাবিশিষ্ট ছয়টি হলের। হলগুলো চালু হওয়ায় আবাসন সঙ্কট দূর হলেও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা।
নতুন নির্মিত হলগুলো হলো বেগম রোকেয়া, তারামন বিবি, ফজিলাতুন্নেছা, শহীদ তাজউদ্দীন, শেখ রাসেল ও কাজী নজরুল ইসলাম হল। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ফজিলাতুন্নেছা ও শেখ রাসেল হল চালু হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয় তাজউদ্দীন ও বেগম রোকেয়া হল। সর্বশেষ গত ৮ অক্টোবর চালু হয় কাজী নজরুল ইসলাম ও তারামন বিবি হল।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নতুন হলগুলোতে এখনও ডাইনিং ও ক্যান্টিন চালু হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তাদেরকে বাইরের হোটেলের বেশি টাকা দিয়ে নিম্ন মানের খাবার খেতে হচ্ছে। এ ছাড়া হলগুলোতে নকশা ও নির্মাণগত বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে হলের বারান্দায় পানি জমে থাকে। লিফটগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে সময়মতো সাহায্যের জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটে শিক্ষার্থীদের আটকা পড়ে থাকতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, সদ্য চালু হওয়া হলগুলোর ফ্লোরের অনেক জায়গায় টাইলস ও প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই প্রত্যেকটা নতুন হলের করিডোর এবং দুই ব্লকের মধ্যবর্তী ফ্লোরে পানি জমে যায়। ভারী বৃষ্টিপাত হলে রুমের বারান্দায় পানি জমে যায়।
প্রতিনিয়ত লিফটের কারণে নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কখনো বিদ্যুৎ না থাকা, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় লিফট। হলগুলোতে জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলেও লিফটম্যানকে সময়মতো পাওয়া যায় না। নতুন হলগুলোতে গ্রাউন্ড ফ্লোরে মসজিদ রাখার ফলে আজানের শব্দ শুনতে পান না শিক্ষার্থীরা।
হলের ওয়াশরুমগুলোতে উপরের তলার পানি চুইয়ে নিচে পড়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ওয়াশরুমের সেন্সর লাইটগুলো কাজ করে না। হলে ডাইনিং চালু না হওয়ায় বাইরে হোটেলে এ ছাড়াও হলগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবলের সঙ্কট থাকায় হলের টয়লেট, করিডোর প্রায়ই অপরিষ্কার থাকে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নতুন হলগুলোতে যেসব খাট, চেয়ার-টেবিল দেয়া হয়েছে তা খুবই নিম্ন মানের। বিপুল বাজেটর এসব আসবাবপত্রের কাঠামে এরই মধ্যে বেঁকে যাচ্ছে। অনেক রুমের সিলিংফ্যান, লাইট, সুইস নষ্ট হয়ে গেছে।
এ নিয়ে বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, হলে প্রায় প্রতিদিন আমাদের কোনো না কোনো সমস্যায় পড়তে হয়। সামান্য বৃষ্টির পানিতেই রুমের সামনের করিডোরে পানি জমে যায়। ফলে পরিবেশ নোংরা হয়ে পড়ে, ওয়াশরুমের সিলিং থেকে নোংরা পানি পড়ে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্য দিকে হঠাৎ লিফট বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে হয়। রাত ৮টার পর লিফটম্যান না থাকায় উপরে উঠতে-নামতে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
নবনির্মিত শহীদ তাজউদ্দিন হলের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল হাসান বলেন, ‘আমারা আশা করছিলাম নতুন নির্মিত হলগুলো সুযোগ-সুবিধায় এবং সৌন্দর্যে উন্নত হবে। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হলগুলোতে নিম্ন মানের আসবাবপত্র দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ রুমের সুইচ, ফ্যান, লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য হল নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা অফিসের পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, হল নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থপতিদের নকশাগত ত্রুটির কারণে বর্তমানে নানা সমস্যা হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমস্যাগুলো ওভারকাম করার চেষ্টা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমি হলগুলোতে গিয়ে সমস্যাগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা এখনো হল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড়পত্র দেইনি। ছাড়পত্র দেয়ার সময় আমরা এসব বিষয় বিবেচনা করব। লিফটের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। তবে লোকবলের সঙ্কট হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। হলের ডাইনিং চালানোর জন্য লোক খুঁজছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।