২০০৬ সালে ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় ‘ইয়া আলী’ গান গেয়ে তাক লাগিয়ে দেন ভারতীয় সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মারা যান ‘কিং অব হামিং’খ্যাত এই গায়ক। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত জুবিনের স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গার্গও।
স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনায় প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর পরেন। সাধারণত, স্বামী মারা গেলে হিন্দু নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর পরেন না। একই চিত্র হওয়ার কথা ছিল জুবিন গার্গের স্ত্রী গরিমার বেলায়ও। কিন্তু তেমনটা দেখা যায়নি। জুবিন মারা যাওয়ার ২০ দিন পরও গরিমা নিয়মিত সিঁথিতে সিঁদুর পরছেন। তারই ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
গরিমার সিঁথির সিঁদুর দেখে নিন্দুকদের অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি পরিষ্কার করতে ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন গরিমা। জুবিনের ছায়াসঙ্গী গরিমা বলেন, “জানতে পারলাম, আমার সিঁথির সিঁদুর নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। পরে মনে হলো, সবাইকে ব্যাপারটা বোঝানো দরকার।”
সিঁদুর পরার কারণ ব্যাখ্যা করে গরিমা বলেন, “আমি আমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করছি, আমি আমার কপালে সিঁদুর রাখব—যতক্ষণ না জুবিনের সঙ্গে আমার আবার দেখা হয়।”
গরিমার এই বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল। নেটিজেনরাও তার অনুভূতিকে সম্মান করছেন। সরাফ নামে একজন লেখেন, “আপনার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাকে (জুবিন) ভালোবাসুন।” সুজাতা লেখেন, “সত্যি আপনার অনুভূতিকে সম্মান করি। স্যালুট গরিমা।” মোনা লেখেন, “তাকে তার মতো বাঁচতে দিন। তার জীবন তার পছন্দ।” এমন অসংখ্য মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে কমেন্ট বক্সে।
একটি চিঠির মাধ্যমে জুবিনের জীবনে আগমন ঘটে গরিমা সাইকিয়ার। আসামের গোলাঘাটের তরুণী গরিমা। মুম্বাইয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে পড়ার সময় জুবিনের ‘অনামিকা’ ও ‘মায়া’ অ্যালবামের গান শুনে গভীরভাবে প্রভাবিত হন গরিমা। ঘরছাড়া, মন খারাপের মুহূর্তে গায়ককে একটি চিঠি লেখেন এই তরুণী। গরিমার এই চিঠি প্রশংসা ও আবেগে ভরা ছিল। আর সেই অচেনা অনুরাগী গরিমার চিঠি পৌঁছায় জুবিনের কাছে। সাধারণত, অনুরাগীদের চিঠির জবাব দিতেন না জুবিন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে, গরিমার সেই চিঠির জবাব দেন জুবিন। সেই একমাত্র যোগাযোগ ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রেমে। একটি সাধারণ চিঠি যে দুটি মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে, জুবিন-গরিমার গল্প তার জীবন্ত উদাহরণ।
প্রেম গাঢ় হতেই জুবিন গরিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাদের এই প্রেমের পথ সহজ ছিল না। গরিমার পরিবার, বিশেষ করে তার বাবা, এই সম্পর্ক মেনে নেননি। অন্যদিকে, জুবিনের অস্থির ও খামখেয়ালি স্বভাবও গরিমাকে বিচলিত করত। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে একসময় গরিমা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এই সময় জুবিনের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
প্রকৃত ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আবার কাছাকাছি আসেন। ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, বলিউডে জুবিনের বড় ব্রেকের আগেই তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর গরিমা শুধুই স্ত্রী নন, হয়ে ওঠেন জুবিনের জীবনের স্থিতিশীল এক আশ্রয়। একদিকে, গরিমা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে, অন্যদিকে, ছায়াসঙ্গী হন জুবিনের সৃষ্টিশীল পথচলায়। আসামের অন্যতম আদর্শ দম্পতি হয়ে ওঠেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।