মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জে সাংবাদিক পরিচয়ে নব দম্পতির কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। চাঁদার পুরো টাকা না দিতে পেরে ইউনিয়ন যুবদল নেতার হামলার শিকার হয়েছেন ওই পরিবার। এঘটনায় থানায় অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার। গেল শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধরা ইউনিয়নের কালিকাকৈর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন (৩৫) সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার আশোক আলীর ছেলে। সে নিজেকে গ্রামগঞ্জের কথা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পরিচয় দেয়। সুমন আহমেদ বাবু (৩২) সদর উপজেলার বালিরটেক এলাকায় মোশারফ হোসেনের ছেলে; সে নিজেকে দেশ প্রতিদিন পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেয়। সিঙ্গাইর উপজেলার ছোট কালিয়াকৈর এলাকার মো. জমির মিয়ার ছেলে বলধারা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক জিয়া (৩৮), একই এলাকার জমির মিয়ার ছেলে যুবদল নেতা আমিনুর রহমান (৩২), আবুল কাদেরের ছেলে মো. আফজাল (৩৪) এবং চুন্নু ব্যাপারীর ছেলে মো. আলী (৩৪)।
এদিকে, দেলোয়ার হোসেন ও সুমন আহমেদ বাবুর পরিচয় জানতে ‘গ্রামগঞ্জের কথা’ ও ‘দেশ প্রতিদিন’ পত্রিকার সম্পাদককে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।
জানা গেছে, তুষার আহমেদ ও আমেনা আক্তার ছোঁয়া প্রেমের সম্পর্কে ঘর বেঁধেছে দেড় মাস আগে। বাল্যবিবাহের অভিযোগ এনে বাড়িতে এসে সাংবাদিক পরিচয়ে এই দম্পতির কাছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে দুই ভুয়া সাংবাদিক। এই ঘটনায় নিউজ না করার শর্তে মধ্যস্থতাকারী স্থানীয় ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মো. জিয়া ভুক্তভোগীর বাড়িতে এসে ৫০ হাজার টাকায় সাংবাদিকদের সাথে বিষয়টি মৌখিক মিমাংসার আশ্বাস দেন। ভুক্তভোগী পরিবার তাৎক্ষণাত ১০ হাজার টাকা ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে তাদের জানান। এতে তারা রাজি না হলে মধ্যস্থতাকারি ইউনিয়ন যুবদল নেতা বাকি ৪০ হাজার টাকা ভুক্তুভোগী পরিবারের সম্মতিক্রমে নিজে সাংবাদিকদের দেবেন বলে জানান। তবে এই ৪০ হাজার টাকা সন্ধ্য়ায় ফেরত দিতে হবে বলে শর্ত দেন। ভুক্তভোগী পরিবার মান-সম্মান এবং সাংবাদিকদের ভয়ের মুখে টাকা দিতে রাজি হন। এরপর নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে দুই ভুয়া সাংবাদিক এবং যুবদল নেতা বিদায় হন।
এরপর সন্ধ্য়ায় ওই যুবদল নেতা জিয়া ভূক্তভোগীর বাড়ির ওপর এসে টাকা ফেরত চাইলে বাকবিতন্ডা বাঁধে। একপর্যায়ে যুবদল নেতা দ্রুত সময়ে টাকা ফেরত না দিলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে চলে যান। এরপর ঐ রাতে ভুক্তভোগী দম্পতির মা (ছেলের মা) স্বপ্না বেগম (৩২) বাদি হয়ে সিঙ্গাইর থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক জিয়া বলেন, ঘটনার দিন সাংবাদিক এবং ওই বাড়ির লোকজন আমাকে ডাকলে আমি যাই। পরে শুনি ছেলে-মেয়ে দুজনেরই বয়স হয়নি। এই বিষয়ে সাংবাদিকরা নিউজ করতে এসেছে। ওই ছেলের মা আমাকে খুব করে রিকোয়েস্ট করাতে আমি সাংবাদিকদের বলি নিউজ না করার জন্য। তখন তাদের সাথে একটা লেনদেনের বিষয়ে কথা হয় এবং আমি ওই মহিলাকে জানাই। তখন তিনি (স্বপ্না বেগম) বলে আমার কাছে এত টাকা নেই আপনি ব্যবস্থা করে দেন, আমার ইজ্জত বাঁচান। পরি তিনি ১০ হাজার টাকা দেন এবং বাকি টাকা আমাকে দিতে বলেন। পরে আমি সাংবাদিকদের আরো ১০ হাজার টাকা আমার কাছ থেকে দেই এবং বিদায় করি। পরে আমি আমার ১০ হাজার টাকা চাইতে গেলে তারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি আরো বলেন, আমাকে ডেকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে বলল। আমি করলাম। ওই মহিলাই সাংবাদিকদের টাকা দিতে বলল, দিলাম। এখন টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে আমি শত্রু হয়েছি। আমি কোন হামলার ঘটনা ঘটাইনি। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য আমার বিপরীত একটা পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে এখানে জড়ানোর চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে কথা হলে সাংবাদিক পরিচয় দানকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা কোন টাকা নেইনি। ওই দিন ওইখানে এলাকার ছেলেপেলে এবং রাজনৈতিক অনেক লোকজন ছিল। তারা যদি আমরা আসার পর ওই পরিবারের কাছ থেকে কোন অর্থ নিয়ে থাকে তা আমার জানা নেই।
তিনি আরো বলেন, আমি তাহলে ওই এলাকার ছেলেপেলেদের ডেকে এমন ঘটনা হয়ে থাকলে টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করছি।
সাংবাদিক পরিচয় দানকারী সুমন আহমেদ বাবু বলেন, শুনেছি আমরা চলে আসার পর অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। তবে এখানে আমি জড়িত নই।
ভুক্তুভোগী পরিবারের স্বজন চাঁন মিয়া (৫০) বলেন, ওই সাংবাদিক টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা বলেছি বাকি ৪০ হাজার টাকার জন্য যুবলীগ নেতা জিয়া ওই বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আপনি জিয়াকে নিয়ে আসেন এবং টাকার বিষয়টা ক্লিয়ার করেন। আর থানায় এই ঘটনায় অভিযোগ হয়েছে। সবাই বসে কি করা যায় তাই করব। কিন্তু আপনি সকলকে হাজির করেন, তা ছাড়া আমরা এই ১০ হাজার টাকা নিব না। পরে ওই দুই সাংবাদিক চলে যান এবং পরদিন ফোন করে বলেন, আজ বিকেলে জিয়াসহ সকলে একসাথে বসে বিষয়টি শেষ দেব। আমি মুরুব্বিদের বিষয়টি জানিয়ে রাখলে তারা বিকেলে অপেক্ষা করে কিন্তু দুই সাংবাদিক এবং জিয়া কেউই আসেনি, টাকাও ফেরত দেয়নি।
অভিযোগকারী স্বপ্না বেগম বলেন, ‘আমার কাছ থেকে টাকাও নিল। আবার আমার বাড়িতে এসে ভয়-ভীতি দেখালো। দেশে কি কোন আইন নাই। সাংবাদিক পরিচয়ে যা ইচ্ছে তাই করবে। আমরা তো আর শখ করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেই নাই। ওদের বিয়ে কিভাবে হয়েছে, মামলায় আমার ছেলে কতদিন জেলে ছিল। কত কষ্ট আমি এবং আমার পরিবার পেয়েছি। এলাকার কিছু লোক পিছু লেগে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আর সাংবাদিকরা কিভাবে না জেনে একটা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। আমি এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’
অভিযোগের তদন্তাকারী কর্মকর্তা এস আই ফজলুর রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থালে গিয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।