সাইফুল ইসলাম : মানিকগঞ্জের তরা বাজারে পুলিশের এক সোর্সের বিরুদ্ধে গাঁজা ব্যবসায়ীকে ধরে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় ও গাঁজা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

গত সোমবার সকালে জাগীর ইউনিয়নের উকিয়ারা এলাকা থেকে ধীরেন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গাঁজা বিক্রি করতে তরা বাজারে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, উকিয়ারার ওই ব্যবসায়ী চামটা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী অনিকের কাছে এক কেজি গাঁজা বিক্রি করতে যান। কিন্তু তিনি তরা বাজারে পৌঁছালে আগে থেকে উৎপেতে থাকা কুরবান ও দীপু ওই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেন। পরে খবর পেয়ে দিঘি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর আলম, তার সহযোগী শাহীন মোল্লা এবং পালন শেখ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মারধর করেন।
একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর বানিয়াজুড়ী তদন্ত কেন্দ্রে ফোন করে জানান, “তরা বাজারে আওয়ামী লীগ–বিএনপি সংঘর্ষ হয়েছে, দ্রুত আসতে হবে।”
এরপর ওই মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা ও গাঁজা আত্মসাৎ করেন জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীরা।
এদিকে, মারামারির খবর পেয়ে বানিয়াজুরী তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই রফিকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর জাহাঙ্গীর পুলিশকে বলেন, “সমস্যা মিটে গেছে, আপনারা চলে যান।”
এএসআই রফিক বলেন, “আমরা ঘটনা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, সমাধান হয়ে গেছে। তখন আমরা বাজার কমিটির সভাপতি ইব্রাহিম, সাধারণ সম্পাদক বেলাল ও উপদেষ্টা হযরতের সঙ্গে কথা বলি। পরে সিদ্ধান্ত হয় বিকেল পাঁচটায় বাজার কমিটির কার্যালয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে।”
তবে দুপুরের দিকে জাহাঙ্গীর বাজার কমিটির সভাপতি ইব্রাহিমকে ফোন করে জানান যে “মীমাংসা হয়ে গেছে।”
বাজার কমিটির সভাপতি ইব্রাহিম বলেন, “একটা ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। পরে বিকেলে বাজার কমিটির অফিসে বসে মীমাংসার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে ফোন করে জানানো হয়, মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে কী ঘটেছিল, কার সঙ্গে ঘটেছিল, তা বলতে পারিনি।”
এদিকে ঘটনার পর বানিয়াজুড়ী তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক জাকারিয়া হোসেন জাহাঙ্গীর ও তার দুই সহযোগীকে তদন্ত কেন্দ্রে ডেকে নেন। প্রায় দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরিদর্শক জাকারিয়া হোসেন বলেন, “আমরা মারামারির খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। পরে শুনি তারা নিজেরাই মীমাংসা করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় কাউকে আটক রাখা হয়নি।”
লিখিত জবানবন্দি বা জিডি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো জিডি করা হয়নি, জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি।”
পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীরা এক কেজি গাঁজা ও এক লাখ টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়। পুলিশকে ডাকার উদ্দেশ্য ছিল ভয় দেখিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জাহাঙ্গীর বহুদিন ধরে নিজেকে পুলিশের সোর্স বলে পরিচয় দেয়। সে এই পরিচয়ে এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত। কেউ কিছু বললে উল্টো ভয় দেখায়।”
স্থানীয়রা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। কারণ, পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে, তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সোমবার সকাল ৯টার দিকে দীপু নামে এক ছোট ভাই ফোন দিয়ে জানায় অনিক ও কুরবান নামের দুজনের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি, শাহীন ও পালন ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি, অনিক ও কুরবান ধস্তাধস্তি করছে। পরে আমি পুলিশকে কল করি।”
তিনি আরও বলেন, “মীমাংসার কথা শুনে তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আমাদের ডেকে নেন। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরিদর্শকও গাঁজা ও এক লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি বলেন। তিনি বলেন, আমি নাকি ৮০ হাজার টাকা নিয়েছি, আর পালন ২০ হাজার টাকা। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি কোনো টাকা বা গাঁজা নেইনি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



