জুমবাংলা ডেস্ক : ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা ও সুরক্ষা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কারিগরি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হবে। এর ফলে তারা নিজেদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরিত প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্প’। এটি ২০২৫ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটি আগামী ২৯ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উপস্থাপন করা হবে, যেখানে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. কাউয়ুম আরা বেগম।
পরিকল্পনা কমিশনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি দেশের ৬৪ জেলায় বাস্তবায়িত হবে। তবে প্রকল্প প্রস্তাবে কিছু ঘাটতি রয়েছে, যেমন — ডিপিপিতে এমটিবিএফ (মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো)-এর তথ্য সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং অর্থ বিভাগের জনবলসংক্রান্ত সুপারিশও সেখানে নেই। এসব বিষয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হবে। যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, তারা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী অসহযোগ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তৈরি হওয়া এই গণ-অভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন ছিল। এতে সব শ্রেণির শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। সরকারিভাবে বলা হয়েছে, এই আন্দোলনে ৮৩৪ জন শহীদ হন এবং আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৪৩ জন। অনেক আহত ব্যক্তি চিরতরে অঙ্গ হারিয়েছেন বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, ফলে তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শহীদ ও আহতদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের এবং শ্রমজীবী পরিবারের সদস্য। তাদের জীবিকাই এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে একটি প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্বনির্ভর হতে পারেন। প্রকল্পের মাধ্যমে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন ট্রেড এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে, প্রশিক্ষণের পর আত্মকর্মসংস্থানের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী তিন বছরে ১২ হাজার ৮০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানে যুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন আরও জানায়, প্রকল্পের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করবেন। প্রকল্পের অর্থায়নের নিশ্চয়তা সম্পর্কেও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
প্রকল্পের প্রশিক্ষণ অংশে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৮ হাজার ৬৮০ জনের জন্য ২৩৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং দক্ষ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে ৪ হাজার ২০০ জনের জন্য ১০৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে। এই প্রশিক্ষণের সংখ্যা, ধরন এবং ব্যয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সভায় তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, প্রকল্পে ঘূর্ণায়মান তহবিল অনুদানের জন্য ২০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৩৭.৭৯ শতাংশ। এই অনুদান কীভাবে ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে এবং এর ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, তা নিয়েও বিস্তারিত ব্যাখ্যা পিইসি সভায় চাওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।