আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কিছুদিন আগে অতিরিক্ত কাজের চাপে জাপানের এক ২৬ বছর বয়সী চিকিৎসক আত্মহত্যা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মীদের এমন চাপেই থাকতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এমন অবস্থাতেও দিনে মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করে বছরে দেড় লাখ ডলার বেতন তুলছেন গুগলের এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
সম্প্রতি ফরচুন ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে গুগল কর্মী ডেভন (ছন্দনাম) দাবি করেন, তিনি দিনে মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করে বছরে এক লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেন।
ডেভন ফরচুনকে বলেন, আমি যদি দীর্ঘ সময় কাজ করতে আগ্রহী হতাম, তাহলে আমি গুগলে না গিয়ে একটি স্টার্টঅ্যাপ প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতাম। আমি এমন কোনো চাকরি করতে চেয়েছিলাম, যেখানে দিন শেষে আমরা নিজের জন্য অনেক বেশি সময় থাকবে। তাই আমি গুগলে গিয়েছি।
তিনি সাধারণত গুগলের টুলস ও প্রোডাক্টগুলোর জন্য কোড লিখেন। যদিও এ কথা শুনে মনে হতেই পারে, এটি বিশাল শ্রমসাধ্য কাজ। কিন্তু এই কাজ করতে দিনে মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করতে হয় ডেভনকে।
ডেভন জানান, তার বস যে কাজ দেন, সেই কাজের ওপর সপ্তাহের শুরুতে একটি কোড লিখে পাঠান এই ইঞ্জিনিয়ার। আর তাতেই সপ্তাহ জুড়ে তেমন একটা কাজ করতে হয় না তাকে। বাকি সময় তিনি তার নিজের স্টার্টাআপের কাজে ব্যয় করেন।
গুগলে ইন্টার্ন করার সুবাধে যখন তিনি সেখানে কাজ করা শুরু করেন তখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে সেখানে চাকরি পেলেও তাকে বেশ কঠোর পরিশ্রম করতে হবে না। সে সময়ে সপ্তাহের দুই হাজার ডলার বেতনে তিনি দৈনিক মাত্র দুই ঘণ্টা কাজ করেছেন। তিনি নিয়মিত অফিসেও যেতেন না। এমনকি ইটার্ন থাকাকালে তিনি খুব দ্রুত তার কোড লিখে হাওয়াইতে এক সপ্তাহের জন্য ছুটি কাটাতেও চলে গেছেন।
ডেভন বলেন, বেশিরভাগ মানুষ কাজের পরিবেশ, কাজের জীবন আর সুযোগ সুবিধার মধ্যে ভারসাম্যের জন্য গুগলকে বেছে নেন। আপনি চাইলে অ্যাপলেও চাকরি করতে পারেন, তবে সেখানে আপনাকে একটি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ডার্ট মাউন্ট টাক স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক বিজয় গোবিন্দরাজন বলেন, ডেভন ওই সব হাজার হাজার কর্মীদের মধ্যে একজন যাদের অর্থ উপার্জনের জন্য মূলত কিছুই করতে হয় না। মহামারি করোনা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে ব্যবসায়িক উত্থানের সময়ে মেটা, গুগল ও সেলসফোর্সের মতো কোম্পানিগুলো ব্যাপক আকারে কর্মী নিয়োগ দেয়, যদিও তাদের সময়ে কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন ছিল না।
কোম্পানিগুলো এভাবে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াকে ‘পেনিং’ বলে। ডেভনকেও এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয় গুগল। তার চাকরির অফার লেটার অনুসারে, ডেভনের বার্ষিক বেতন প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার ডলার।
তিনি বলেন, ‘মূলত এই প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী পেলেই নিজেদের করে নিচ্ছে, যেন তারা অন্য প্রতিষ্ঠানে না চলে যায়। যেন তারা গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রতিষ্ঠানের গিয়ে এমন কোনো পণ্য তৈরি না করেন, যা গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে।’
এর আগে জানুয়ারিতে যখন ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল গুগল, তখন অ্যাফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাই বলেছিলেন, ‘আজ আমরা যে পরিস্থিতির মুখে রয়েছি, তার চেয়ে ভিন্ন একটি অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আমরা কর্মী নিয়োগ দিয়েছিলাম। ভবিষ্যতে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করা হবে।’ ডেভনের প্রসঙ্গে কথা বলতে গুগলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফরচুনের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
প্রতিবেদনে ফরচুন উল্লেখ করেছে, ৯৭ শতাংশ গুগল কর্মী মনে করেন টেক জায়ান্টটি কাজ করা একটি দুর্দান্ত জায়গা। কেননা, গুগল তাদের দেয়া সুযোগ-সুবিধাদির জন্য সুপরিচিত। এটির অফিস, জিম ও বিনামূল্যে খাবার ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধায় পরিপূর্ণ। তাছাড়া ছয় অঙ্কের বড় মাইনের পাশাপাশি সাইন অন বোনাস ও ইয়ার এন্ড বোনাসও দেয় গুগল। একটি উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় গুগল কর্মীদের বছরে একবার আনুষ্ঠানিক পারফরম্যান্স রেটিং দেয় এবং সে অনুসারে বছরের দুইবার প্রমোশনও দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।