সমন্বিত ইসলামি ব্যাংকের যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটেছে দেশের পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের। এখন এসব ব্যাংকের কার্যত কোনো অস্তিত্ব নেই। অনিয়ম, অদক্ষতা আর দায়িত্বহীনতার পরিনাম শেষ পযর্ন্ত ব্যাংকগুলোকে থামতে হলো।

গত ৫ নভেম্বর যে পাঁচটি ব্যাংক অকাযর্কর ঘোষণা ও একীভূত করা হয়, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেশে আর্থিক সেবা দিয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এরপর যথাক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ব্যাংক।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড নামে বেসরকারি তফসিলি ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৯৯৫ সালের ২১ আগস্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয় এবং ২২ নভেম্বর ব্যাংকটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
এই ব্যাংকের প্রাথমিক উদ্যোক্তারা হলেন— প্রফেসর ড. এম এ মান্নান; মেজর ডা. মো. রেজাউল হক (অব.); ডা. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন; মৃত মো. ইব্রাহীম মিয়া; মৃত মোহাম্মদ আব্দুল মালেক; মৃত মো. আব্দুল হাকিম, প্রতিনিধি ফাউনটেন (প্রা.) লি.; মোরশেদ আলম, প্রতিনিধি বাংলাদেশ সোশ্যাল পিস ফাউন্ডেশন এবং আরও ৩১ জন।
ব্যাংকটির প্রথম অফিস ১৭৩, এয়ারপোর্ট রোড, তেজগাঁও, ঢাকা। প্রথম শাখা প্রিন্সিপাল শাখা, ১৫, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ অবধি ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৮ শতাংশ। ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ২০৮ কোটি টাকা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৯৯৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৯ সালের ২ অক্টোবর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
এই ব্যাংকের প্রাথমিক উদ্যোক্তারা হলেন— মনোয়ারা সিকদার, নাসিম সিকদার, পারভিন এইচ সিকদার, মাহমুদুল হক সিকদার, সহিদুল হক, ফাতেমা হক (লিসা) এবং আরও ২২ জন।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রাথমিক অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকা।
প্রথম চেয়ারম্যান নাসিম সিকদার এবং প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক/ নির্বাহী প্রধান মো. সরওয়ারুজ্জামান খান।
ব্যাংকটির প্রথম অফিস ২৩, দিলকুশা, ঢাকা এবং প্রথম শাখা দিলকুশা, ঢাকা।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৭ শতাংশ। ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ ৬১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড
বেঙ্গল এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক লিমিটেড নামে বেসরকারি তফসিলি ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৯৯৯ সালের ১৪ জুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে ওইদিনেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
এই ব্যাংকের প্রাথমিক উদ্যোক্তারা হলেন— এনামুল হক চৌধুরী, মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার, মো. নজরুল ইসলাম স্বপন, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মো. আলতাফ হোসেন, নাসরিন ইসলাম, মো. মাযাকাত হারুন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মো. ফাহিম জামান পাঠান, আসমা বেগম, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমান খান, জুবায়ের কবীর, ইফাত আখতার এলিন, রিজওয়ানা কে রিজা, মো. হাবিবউল্লাহ, মো. নুর হোসেন, হাসিনা আক্তার, অঞ্জনকুমার সাহা, এ কে এম নূরুল ফজল, মো. আব্দুল মান্নান, ফারজানা ইসলাম, রাবেয়া খাতুন, মাহমুদা বেগম, নাসিমা আক্তার, সাবিরা সুলতানা, মমতাজ বেগম, মো.সাইফুল আলম, হামিদা রহমান।
ব্যাংকটির প্রাথমিক অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রথম চেয়ারম্যান মরহুম শাহজাহান কবির এবং প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক/নির্বাহী প্রধান মোহাম্মদ লকিয়তউল্লাহ।
ব্যাংকটির প্রথম অফিস ১০৪, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। প্রথম শাখা মতিঝিল, ঢাকা।
১৯৯৯ সালে ১৬ নভেম্বর ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক লিমিটেড নাম ধারণ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত চিত্র অনুযায়ী ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের হার ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণের পরিমাণ মাত্র ৩ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৮২ কোটি টাকা। ব্যাংকটি দেশের অন্যতম একটি ভালো ব্যাংক। একীভূত করা হবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন ঘোষণার পর থেকে সংকটে পড়া শুরু করে। এক পর্যায়ে চৌকস কর্মকর্তারা ব্যাংকটি ছেড়ে যেতে থাকেন।
ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন মো. ফরিদউদ্দিন আহমেদ এবং প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। এটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একই বছরের ৫ নভেম্বর কার্যক্রম শুরু হওয়া ব্যাংকটির অকার্যকর হওয়ার দিন পর্যন্ত শাখা ছিল ৬৭টি। দেশের ২৫টি জেলাতে এসব শাখা অবস্থিত।
দেশে একসঙ্গে যাত্রা শুরু হওয়া ৯টি ব্যাংকের মধ্যে এটি একটি। শুরুতে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি পেলেও পেছন থেকে ব্যাংকটির মূল মালিক ছিলেন এসআলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম।
সবশেষ ব্যাংকটির পুরো ঋণই খেলাপিতে পরিণত হয়। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ নাগাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী খেলাপি ঋণ ৯০ শতাংশ। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। তাই ব্যাংকটি একীভূত না হলে বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পূর্বনাম এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৩ সালে যে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়, এরমধ্যে তিনটি ব্যাংক দেওয়া হয় প্রবাসী উদ্যোক্তাদের। এই তিনটির মধ্যে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক একটি।
ব্যাংকটি প্রবাসী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে। সে সময় উদ্যোক্তারা প্রবাসী বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রবাসীদের আয় দেশে আনতে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি ব্যাংকটি। যত দিন গেছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে দ্বন্দ, অবিশ্বাস ও অনৈক্য চরম আকার ধারণ করে, যা ব্যবস্থাপনাকেও প্রভাবিত করে। শেষে ব্যাংকটি অর্থ লুটের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিষ্ঠার এক যুগের মাথায় ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার ৬০ শতাংশকে স্পর্শ করে। টাকার অংকে যা প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিও তাই একীভূত করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
সুত্র : বাংলানিউজ২৪
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



