আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে সেনাবাহিনীর এক মেজরের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে দাবিটি সত্য নয়।
মঙ্গলবার (৬ মে) রিউমর স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে সেনাবাহিনীর এক মেজরের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
এই দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে দেশটির শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ‘ডন’ পত্রিকার একটি কথিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে, যা গত ৩ মে পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া, পাকিস্তান এমিরেটস মিলিটারি হসপিটালের (পিইএমএইচ) একটি কথিত মেডিকেল রিপোর্টের ছবিও এই দাবির সমর্থনে প্রচারিত হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কারাগারে সেনাবাহিনীর এক মেজরের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, দেশটির শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ‘ডন’ পত্রিকার নামে ভুয়া প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট ও একটি ভুয়া মেডিকেল রিপোর্টের বরাতে এই দাবিটি ছড়ানো হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে, ‘ডন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এমন কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। সার্চ ইঞ্জিনে অনুসন্ধান, পত্রিকাটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল খতিয়ে দেখলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটির অস্তিত্ব মেলেনি। বরং, ভাইরাল স্ক্রিনশটটি পর্যালোচনা করলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি ধরা পড়ে। কথিত ওই প্রতিবেদনটির শিরোনামের একটি অংশে ‘a army’ লেখা হয়েছে, কিন্তু ইংরেজি ব্যাকরণ অনুযায়ী সঠিক রূপ হবে ‘an army’। ‘ডন’-এর মতো একটি প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমে এমন মৌলিক ভুল সাধারণত দেখা যায় না।
পরবর্তীতে উক্ত মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে অনুসন্ধানে আফগান বংশোদ্ভূত ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষক কায়েস আলামদারের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, আলোচিত মেডিকেল রিপোর্টটি ভুয়া এবং সংশ্লিষ্ট দাবিটিও ভিত্তিহীন।
এর ব্যাখ্যায় তিনি জানান, রিপোর্টটিতে ৩ মে ২০২৫-এর তারিখ থাকলেও এটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে তার একদিন আগেই, ২ মে। এই সময়গত অসঙ্গতিকে তিনি রিপোর্টটির ভুয়া হওয়ার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন। পাশাপাশি, ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে তিনি এই দাবিতে প্রচারিত ডন পত্রিকার আলোচিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটটিকেও ভুয়া বলে দাবি করেন। তার মতে, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার (কাশ্মীরে হামলার প্রেক্ষাপটে) মধ্যে এটি একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানেও একই তথ্য উঠে আসে। এ ছাড়া ভাইরাল মেডিকেল রিপোর্টটিতে পাকিস্তান এমিরেটস মিলিটারি হসপিটালে (পিইএমএইচ) নাম দেখা যায়। তবে ডন পত্রিকার ৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি ইমরান খানের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আদিয়ালা কারাগারে যান পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (পিআইএমএস) হাসপাতালের চার সদস্যের একটি চিকিৎসক দল। ওই প্রতিবেদনে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই।
সুতরাং, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি ভুয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।