বিনোদন ডেস্ক : তরুণ অভিনেত্রী দ্বীপান্বিতা রায়। বেশ কয়েকবছর ধরে নিয়মিত অভিনয় করছেন। তবে বড় কোনো চরিত্র নয়। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে এতদিন অভিনয় করেছেন তিনি।
বছর কয়েক আগে নাটক প্রযোজনাও করেছেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা দ্বীপান্বিতা রায় গত পরশু ফেসবুকে দিয়েছেন এক দীর্ঘ পোস্ট। সেখানে তিনি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। বলেছেন নানা ধরণের কু প্রস্তাব পাওয়ার ঘটনাও।
এমনকি ঘোষনা দিয়েছেন আর কখনোই অভিনয় করবেন না তিনি। তিনি লেখেন, ‘‘পাঁচ বছর আগেই শ্রদ্ধেয় ডিরেক্টর তানভীর মোকাম্মেল ভাইয়া আমাকে বলেছিলেন, ‘দীপা, মিডিয়া তোমার মত সৎ মেয়ের জন্য নয়।’ গুণীজনের কথা আমি বিশ্বাস করলেও পুরোপুরি মনে ধারণ করতে পারিনি, মানে মন মানেনি। সরকারি চাকরি ছেড়ে যখন আমি ঢাকায় এসেছিলাম, তখন আমি জানতামই না যে, সতীত্ব বিসর্জন না দিলে এখানে একটি কাজও পাওয়া যায় না।
৫ বছর চেষ্টা করলাম আমি, আর কত? গিভ এন্ড টেক অর্থাৎ কারো বিছানায় না গেলে যে সত্যি ই একটিও কাজ পাওয়া যায় না, আমি আসলেই বুঝতে পারিনি।’’
তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে ডিরেক্টর গিল্ডেরই সদস্য কিছু ডিরেক্টর আমাকে বোঝালো, হয় সতীত্ব বিসর্জন দাও, নয়তো ইনভেস্ট করো। যেহেতু যে কোনো মূল্যেই আমি আমার সতীত্ব নষ্ট করব না, তাই ইনভেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবু নাকি আমাকে মেইন কাস্টিং করা যাবে না। আমাকে মেইন কাস্টিং করলে নাকি সেই নাটক টেলিভিশনে চালানো যাবে না।
তাই একেকটি নাটকে ২/৩ লাখ টাকা ইনভেস্ট করে সাধারণ চরিত্রগুলো করতে থাকলাম। আশায় বুক বাঁধলাম, নিজের প্রোডাকশন দিয়ে পরিচিতি পাওয়ার পরে হয়তোবা আমি যোগ্যতাবলে সৎভাবে বাইরের কাজ পাব, পাশাপাশি নিজের প্রোডাকশনগুলো চালিয়ে যাব। ডিরেক্টরের কাছে আমার একটাই দাবী ছিল, তারা যেন আমার আসল টাকা ব্যাক দেয়। কিন্তু সেখানে ঘটল আরও বড় বিপত্তি। নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়, কিন্তু টাকা ব্যাক পাই না। আমি আমার সরকারি চাকরি ছেড়ে পাওয়া পেনশনের টাকা, জমি বিক্রি করা টাকা, গহনা বিক্রি করা টাকা একের পর এক হারাতেই থাকলাম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আর আমার পাওয়া হয়ে উঠলো না। নিজে ইনভেস্ট করতে পারলে কাজ করার সুযোগ হয়, তা না হলে হাজারবার পায়ে ধরলেও কেউ একটি কাজে ডাকে না।’
তিনি দেশের পরিচালকদের কথা উল্লেখ্য করে বলেন, ‘বাংলাদেশের বড় বড় ডিরেক্টরদেরকে দিনের পর দিন অনুরোধ করেছি, বছরের পর বছর নক করেছি। এক শ্রেনীর ডিরেক্টররা বলল, ক্যারেক্টার এলেই দেব। কিন্তু কবে সেই ক্যারেক্টার আসবে? এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো প্রতিত্তর আর হয় না। আরেক শ্রেণির ডিরেক্টররা বলল, গিভ এন্ড টেক ছাড়া তোমাকে কেন কাজ দেব? তবে হ্যাঁ, শুরুর দিকে কয়েকজন এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের মাধ্যমে বাইরের কিছু প্রোডাকশনে ছোটখাটো কিছু ক্যারেক্টারে পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু সেখানে ১ লট কাজ করার পরই স্বয়ং ডিরেক্টরের কাছ থেকে থাকতো নোংরা প্রস্তাব। আমি তাতে সাড়া না দেওয়ার কারণে সেখানেই কাজের ইতি টানতে হতো।’
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, স্রোতের প্রতিকূলে হাঁটছি আমি। মিডিয়ায় আমি বেমানান। নয়তো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি করেও এই নোংরামির মধ্যে আসে কেউ? বুঝতে পারিনি। সরকারি চাকরি ছেড়ে এসেছি তাই যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে থাকলাম। আমার সততার লড়াই। মনে মনে পণ করেছিলাম, সতীত্ব নিয়ে যে কাজ করা যায়, সেই প্রমাণ আমি নিজে নিজেকেই দেব। নিজের অন্তত ১৫ টা ভালো ভালো টেলিভিশন প্রোডাকশনে কাজ করার পরেও ছোটখাটো একটি ইউটিউবের কম বাজেটের কাজেও শত অনুরোধের পরও আমি সুযোগ পাইনি। অথচ, আমার চোখের সামনে নতুন নতুন মেয়েরা এসে জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে, যাদের নূন্যতম অভিনয়ের যোগ্যতাটুকুও নেই। আর যেসব ডিরেক্টর আমার টাকায় নাটক বানিয়ে বলতো, আমাকে মেইন কাস্টিং দিলে নাকি সেই নাটক টেলিভিশনে প্রচার করা যাবে না, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তাহলে আমি নিজে ডিরেকশন দিয়ে আমার নাটকে আমি মেইন কাস্টিং করে টেলিভিশনে কি করে চালালাম?’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি যে এত এত বড় বড় ডিরেক্টরকে অনুরোধ করেও সামান্য একটি সিন এমনকি কাজের মেয়ের ক্যারেক্টারের ১ সিন হলেও করার সুযোগ পাই না, অথবা আমাকে সুযোগ দেওয়া হয় না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, তাহলে কি আমি অভিনয়ে দূর্বল অথবা যোগ্য নই? হ্যাঁ, এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে প্রথমেই বলতে চাই, আমি থিয়েটার করা মেয়ে। ছোটবেলা থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার বেড়ে ওঠা। স্কুল ও কলেজে পড়াশোনার সময় জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্যবার অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেয়েছি। গত ৫ বছরের মিডিয়া ক্যারিয়ারে আমি আমার নিজের প্রোডাকশন এর দুইটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সেন্সর করিয়েছি এবং বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল এ পাঠিয়ে সফলতা অর্জন করেছি। সর্বোপরি আমি নিজের যোগ্যতায় তিন রাউন্ড অডিশন দিয়ে শ্যাম বেনেগাল এর বঙ্গবন্ধু বায়োপিক এ কাজ করে বেশ বড় এমাউন্টের সম্মানীও পেয়েছি। অথচ আমি যখন এই সিনেমায় অডিশন দিতে যাই, তখন আমি এফডিসি চিনিও না, একা একা লোকের কাছে খুঁজে খুঁজে আমি সেখানে গিয়ে অডিশন দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিজের কথাগুলো লিখতে আমি চাইনি। গত ৫ বছরে হাজারবার লিখতে গিয়েও মুছে ফেলেছি, পোস্ট দিতে গিয়েও দেইনি। কারন, এসব কথা লিখলে নাকি একটি মেয়েকেই নোংরা কথা বলা হয়। কিন্তু সহ্যের একটি সীমা থাকা দরকার। আমি এ্যক্টরস ইকুইটির মেম্বর হয়েও কেন ৩/৪ মাসেও সাধারণ একটি কাজও পাব না? মেইন কাস্টিং নয়, গুরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার নয়, ১ টি সিনে অভিনয়ের জন্য ভিক্ষা চেয়েও পাইনি। বাংলাদেশের বড় বড় অধিকাংশ পরিচালককেই আমি কয়েক হাজার বার অনুরোধ করেছি, নতজানু হয়ে ভিক্ষা চেয়েছি। অবশ্য এদের মধ্যে একজন নারী পরিচালক আমাকে সৎভাবে ২/৩ টা কাজে রেখেছেন। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তার নাম আমি উল্লেখ করলাম না, কারো নামই যেহেতু উল্লেখ করিনি। ’
পোস্ট শেষ করেছেন এভাবে, ‘আর সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা সেটাই, যে সব পরিচালকেরা আমার টাকাগুলো মেরে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ডিরেক্টর গিল্ডে দরখাস্ত দিয়েও আমার টাকা ফেরত পাইনি। হ্যাঁ, ডিরেক্টর গিল্ড বিচারকার্য সম্পন্ন করে দুজন পরিচালককে আমার টাকা ফেরত দেওয়ার আল্টিমেটাম দিলেও টাকা আমি আজও পাইনি। ঘেন্না ধরে গেছে আমার মিডিয়ার প্রতি। প্রথমে আমি যেটা বিশ্বাস করিনি, আজ হলফ করে বলছি, এখানে কমবয়সী প্রতিটি নারীই প্রোস্টিটিউট, আর ডিরেক্টররা নারীর দালাল। এই কথাটা লোকমুখে শুনলেও আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু সতীত্ব ঠিক রেখে স্রোতের প্রতিকূলে হাঁটতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে পড়ে বার বার উঠে দাঁড়িয়ে আজ আমি নিশ্চিত হয়ে বলছি, মিডিয়া কোনো সতী মেয়ের জন্য নয়, ঘেন্না করি আমি মিডিয়াকে। আজ থেকে আমি মিডিয়া থেকে সরে দাঁড়ালাম। মিডিয়াকে নিজের টাকায় কিনে নেওয়ার সাধ্য যদি হয় কোনোদিন, সেদিন ফিরব আবারও। নয়তো হারিয়ে যাব নিজের মতো।’
জানা গেছে, পাঁচ বছর ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত তিনি। কাজ করেছেন বেশ কিছু নাটক ও টেলিছবিতে। এছাড়া লেখালেখিও করেছেন। বইও প্রকাশ হয়েছে তার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।