খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছেন সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি সেনানিবাসে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেন, ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ। এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশীয় ও অটোম্যাটিক (স্বয়ংক্রিয়) অস্ত্রে গুলি চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির বিষয়টি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। এসবের প্রমাণাদি আমাদের কাছে রয়েছে। নানা অপপ্রচার ও উসকানির মধ্যেও সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও অবিচ্ছেদ্য অংশ রক্ষায় সবকিছু করবে।
রিজিয়ন কমান্ডার ইউপিডিএফকে দেশের স্বার্থে অবরোধ প্রত্যাহার করে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা চলাকালীন সবাই যেন স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ দিকে ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে ডাকা অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ চতুর্থ দিনের মতো চলছে। যদিও গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনকারীরা খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে সীমিতভাবে অবরোধ শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে।
আজও যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ, অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ অচল। ফলে শতাধিক মালবাহী ট্রাক আটকে পড়েছে এবং পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন। তবে নতুন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে সড়ক অবরোধ ডাকা হয়। এ কর্মসূচি থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় সহিংসতা ঘটে, যাতে তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। আহত হন সেনা কর্মকর্তাসহ বহু পাহাড়ি ও বাঙালি। রামসু বাজারসহ বহু ঘরবাড়ি ও অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
স্থানীয় ওসিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজও খাগড়াছড়ি শহর, শহরতলী ও গুইমারার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। সীমিত সংখ্যক ইজিবাইক চলাচল করছে। রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়াও বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বর্তমানে খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্দেশনা তুলে নেওয়া হবে।
জানা গেছে, সোমবার আন্দোলনকারী ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ছয় প্রতিনিধি প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারসহ আট দফা দাবি উপস্থাপন করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী বলেন, রবিবার সহিংসতায় নিহত তিন পাহাড়ির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং রাতেই দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।
ছবি ও সূত্র : আরটিভি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।