জুমবাংলা ডেস্ক : গরুর মাংস বিক্রি করেও সারাদেশে আলোচিত ও প্রশংসিত হওয়া যায় এমনটাই করে দেখিয়েছেন কম দামে মাংস বিক্রি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া রাজধানীর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল।
৬০০ টাকার নিচে বিক্রি করলেও লোকসান নেই বলে দির্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলেন এই মাংস বিক্রেতা। তবে খলিলের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড মানুষের মনে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
মূলত জনমনে এই প্রশ্ন তৈরি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, ১০ রমজানে এক ধাক্কায় ৫৯৫ টাকা থেকে মাংসের দাম ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৯৫ টাকা করেছেন। এছাড়াও গরুর দাম বেশি অজুহাত তুলে ভারত থেকে গরু আনতে ১০ দিনের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। সবশেষে সীমান্ত খুলে দেওয়ার দাবিতে তিনি দু’দিনের জন্য দোকানও বন্ধ রেখেছেন।
যদিও আজকে আবারও ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।
হঠাৎ খলিলের এমন আচরণে ক্রেতাদের মাঝে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। জানা গেছে, অন্য বিক্রেতারা বিষয়টিকে সহজভাবে নেননি। অনেকেই বলছেন, ভারত থেকে গরু আনতে তাঁকে কেউ ব্যবহার করছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত। তবে মাংসের দাম সহনীয় রাখতে বাজার ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না।
প্রথম রমজান থেকে ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করে লাভের মুখে দেখেছেন বলে ঘোষণা দেওয়া খলিল হঠাৎ ১০ রমজান থেকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্ধারিত ৬৬৫ টাকার চেয়েও বেশি দামে মাংস বিক্রি করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধের কারণে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে খলিলের সীমান্ত খুলে দেওয়ার দাবি অযৌক্তিক।
গতকাল দেখা যায়, খলিলের দোকানের সামনে ঝুলছে শনি ও রোববার বন্ধের নোটিশ। পূর্বঘোষণা ছাড়া দোকান বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন মাংস কিনতে আসা মানুষ। মোবাইল ফোনে খলিলুর রহমান দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানান, কম দামে মাংস খাওয়াতে গিয়ে অনেক লোকসান দিয়েছি। গরুর দাম বেড়ে গেছে। কম দামে মাংস খাওয়াতে হলে ১০ দিনের জন্য ভারতের সীমান্ত খুলে দিতে হবে।
তবে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, খলিল ভাইরাল হতে মাংসের দাম কমিয়েছেন। আমদানিকারকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি ভারত থেকে গরু আমদানির কথা বলেছেন।
‘অন্যরা পারলে খলিল কেন পারছে না’ মালিবাগের খোরশেদ ৬০০, পুরান ঢাকার নয়ন আহমেদ ৫৭০ ও মিরপুরের উজ্জ্বল ৫৮০ টাকায় এখনও গরুর মাংস বিক্রি করছেন। ঢাকার ১৮টি স্থানে ও সারাদেশে ৫০টি স্থানে কম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের প্রশ্ন, অন্যরা কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করতে পারলে খলিল কেন পারছেন না? মিরপুরের উজ্জ্বল বলেন, ৫৮০ টাকা গরুর মাংস বিক্রি করেও সীমিত লাভ করছি। একটি চক্র দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ গরু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার মণ্ডল বলেন, বাজারে গরুর দাম তিন মাস আগে যেমন ছিল এখনও তেমন। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, খামারে গরুর দাম আগের মতোই আছে। হঠাৎ রমজানে গরুর দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
অনেক দিন ধরে কিছু ব্যবসায়ী ও ক্রেতা অভিযোগ করছেন, খলিল কম দামে বিক্রি করে ভাইরাল হয়েছেন। এটাকে পুঁজি করে নিম্নমানের মাংস বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন। তবে চলতি মাসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই ব্যবসায়ীকে ‘ব্যবসায় উত্তম চর্চার স্বীকৃতি’ দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, মাংস বিক্রেতারা মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করে দাম কমিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়।
গরুর মাথা, কলিজা, চর্বি, পা ও হাড় মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করায় ক্রেতারা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস পাচ্ছেন। এটা এক ধরনের ভাঁওতাবাজি। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির শীর্ষ এক নেতা গণমাধ্যমকে জানান, মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বাজারে কলকাঠি নাড়ছেন। সমিতির মেয়াদ কয়েক বছর আগে শেষ হয়ে গেলেও তিনি সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন।
ভারত থেকে গরু আনতে সীমান্ত খুলে দেওয়া দাবি কতটা যৌক্তিক– এ প্রশ্নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় দেশের ডেইরি খাত অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। এমন সুসময়ে মাংস কিংবা গরু আমদানির প্রশ্নই আসে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।