শামীম হোসেন সামন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা): সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঢাকার নবাবগঞ্জের খলিল মোল্লা স্বপ্ন দেখেন নার্সারি করার। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেন গাছের চারা রোপণ। বাড়ির আঙিনায় নিয়মিত বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ রোপণ করে স্বল্প দামে বিক্রি শুরু করেন। একসময় এই শখ পরিণত হয়ে যায় আয়ের উৎসে।
২০০১ সালে ৩০ শতাংশ জমিতে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। প্রথমে মেহগনি, আকাশি ও আম গাছ রোপণ করেন। কয়েক বছরের মধ্যে এলাকায় সাড়া ফেলেন তিনি। গাছের গুণগত মান ভালো হওয়ায় অনেকেই গাছের চারা কিনতে আসতে শুরু করে তার নার্সারিতে। তার নার্সারিতে ফল গাছের পাশাপাশি আছে বিভিন্ন ফুল ও ঔষধি গাছ। একসময় নিজ গ্রামে নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ইউনিয়নের দীর্ঘগ্রামে ছোট্ট পরিসরে গাছের চারা রোপণ ও বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে চারা বিক্রি বাড়তে থাকে। মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই লাভের মুখ দেখতে পান তিনি। সফলতার হাতছানিতেই নার্সারির প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বর্তমানে ৭৫ শতাংশ জমিতেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা নিয়ে উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের মাদলা গ্রামে গড়ে তুলেছেন নার্সারি। নার্সারি করে সফলতা পেয়েছেন খলিল মোল্লা।
খলিল মোল্লা জানান, বর্তমানে ৭৫ শতাংশ জমিতে নার্সারি রয়েছে। এ বছর এই জায়গায় বিভিন্ন বনজ, ফলদ, ঔষধি ও ফুলের চারা রোপণ করেছেন। এর মধ্যে এ বছর তিনি নারিকেল ও সুপারি চারাও বিক্রি করেছেন। তার এখানে ভিয়েতনাম ও বার্মার নারিকেল ও সুপারি চারা রয়েছে। এ ছাড়াও নার্সারিতে দেড় শতাধিক প্রজাতির বনজ ও ফলদ গাছ রয়েছে। আমের জাতের মধ্যে সূর্যডিম, হাঁড়িভাঙ্গা, ল্যাংড়া, আমরুপালি, হিমসাগর, গুটি ফজলিসহ প্রায় ৩০টি জাতের চারা রয়েছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাসনাহেনা, বকুল, কৃষ্ণচূড়াসহ শতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে। এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছও।
তিনি আরও জানান, জীবিকার তাগিদে এই নার্সারিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। পরিবারের অভাব অনটনেও কখনই নার্সারির স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি। কয়েকবার বন্যার পানিতে গাছের চারা ভেসে গেলেও তার স্বপ্ন কখনই তাকে পেছনে ফিরতে দেয়নি। স্বপ্নবাজ হওয়ায় বারবার লোকসানের মুখে পড়েও আবারও নতুন করে শুরু করেছেন নার্সারি। গাছের চারা বিক্রি করে চার মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করেছেন। ছেলেকেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই নার্সারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে আঞ্জুনি নামে এক মধ্য বয়সি মহিলার। তিনিও নার্সারিতে কাজ করে দুবেলা খেতে পারছেন।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যারা নার্সারি করেছেন তাদের নার্সারি নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। বৃক্ষমেলায় তাদের চারা গাছ বিক্রি করারও সুযোগ রয়েছে। পোকামাকড় আক্রমণ থেকে মুক্তির জন্য পরামর্শও দেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।