জুমবাংলা ডেস্ক : টানা তৃতীয় বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরই মধ্যে দিল্লি পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তিনি যেন দিল্লি না যান, সে জন্য খালিস্তানপন্থি পরিচয়ে একটি ‘হুমকি বার্তা’ পাঠানো হয়েছে। রবিবার (৯ জুন) দিল্লির ওই অনুষ্ঠানে ‘খালিস্তানি পতাকা ওড়ানো হবে এবং ড্রোন দিয়েও হামলা চালানো হবে’ বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ওই বার্তায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ঢাকাতেই থাকুন, নিরাপদে থাকুন।’
তবে যথারীতি সেই হুমকি উপেক্ষা করে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ইতোমধ্যেই দিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক-সহ দিল্লিতে তার কোনও কর্মসূচিতেই কোনও পরিবর্তনও হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসা এই হুমকি বার্তাটি এসেছিল লন্ডনের (যুক্তরাজ্য) একটি ফোন নম্বর থেকে। যারা বার্তাটি পাঠিয়েছে তারা নিজেদের ‘শিখস ফর জাস্টিস’ নামে একটি খালিস্তানি সংগঠনের সদস্য এবং ওই সংগঠনের নেতা গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নুর অনুগামী বলে পরিচয় দিয়েছে। তবে ফোন নম্বরটি আসলে কার অথবা এটি মিথ্যে পরিচয়ে বানানো কি না, তা এখন অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।
এই অডিও বার্তাটির একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতেও এসেছে। মিনিট খানেকের ওই বার্তায় ইংরেজিতে (যাতে দক্ষিণ এশীয় অ্যাকসেন্ট খুব স্পষ্ট) যা বলা হয়েছে তা এরকম, ‘এই বার্তাটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিবি শেখ হাসিনার জন্য! ভুলেও যেন ভারতের টেরোরিস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি যাবেন না।’
বার্তায় আরও বলা হয়, ‘শিখস ফর জাস্টিস একটি খালিস্তানের সমর্থক সংগঠন এবং আমরা ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত আছি। আর ৯ জুন (শপথ গ্রহণের দিন) নরেন্দ্র মোদি হলেন আমাদের (আক্রমণের) টার্গেট। শিখস ফর জাস্টিস ওই দিন অনুষ্ঠানে খালিস্তানি পতাকা ওড়াবে এবং ড্রোনও কাজে লাগানো হবে (হামলা চালানোর জন্য)! সুতরাং বিবি শেখ হাসিনা, আপনি খালিস্তানি শিখদের শক্তি আর মোদির মাঝে যেন ভুলেও আসবেন না! আপনি বাংলাদেশেই থাকুন, নিরাপদে থাকুন।‘
‘এটাকে আমাদের হুঁশিয়ারিও বলতে পারেন, পরামর্শ হিসেবেও নিতে পারেন। আমাদের নেতা গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নু ও শিখস ফর জাস্টিসের জেনারেল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এটা আপনাকে জানিয়ে রাখা হলো’, হুমকি বার্তায় বলা হয়।
প্রসঙ্গত, ভারতের বাইরে কানাডা, যুক্তরাজ্য বা আমেরিকার মতো দেশগুলোর মাটি থেকে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই পাঞ্জাবে শিখদের পৃথক রাজ্য বা ‘খালিস্তানে’র পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। গত কয়েক বছরে খালিস্তানিরা এই সব দেশগুলোতে ভারতের দূতাবাস বা কনস্যুলেটগুলোতেও একাধিকবার হামলা চালিয়েছে, কিংবা ভারতীয় মিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভও দেখিয়েছে।
তবে ভারত সরকারের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যেন বিদেশি একজন রাষ্ট্রনেতা অংশ না নেন, সে জন্য তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে– এ ধরনের ঘটনা খালিস্তানিদের দিক থেকে এই প্রথম।
তবে স্পষ্টতই শেখ হাসিনা ও তার উপদেষ্টারা এই হুমকিতে কর্ণপাত করেননি এবং পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দিল্লি পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনের একটি বিশেষ ফ্লাইট শনিবার (৮ জুন) বেলা ১১টা ৫১ মিনিটে (স্থানীয় সময়) দিল্লির ভিভিআইপি বিমানবন্দর পালাম এয়ার ফোর্স স্টেশনে অবতরণ করে। এর আগে ফ্লাইটটি সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।
পালাম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব (সিপিভি ও ওআইএ) মুকতেশ পরদেশি, বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার প্রনয় ভার্মা এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান অভ্যর্থনা জানান।
তবে খালিস্তানিদের এই হুমকির বিষয়ে ঢাকা যথারীতি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছে বলে একাধিক সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, শিখরা চায় ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের নিজস্ব একটি সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্র, যার নাম হবে খালিস্তান। তাদের দাবি, এই স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে হবে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতার সময় থেকে। তখন পাঞ্জাব প্রদেশকে নিয়ে এমন ধারণা উঠেছিল আলোচনার টেবিলে। পঞ্চাশের শতকে পাঞ্জাবে প্রতিষ্ঠিত হয় শিখ ধর্ম। এখন বিশ্বজুড়ে এর অনুসারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। পাঞ্জাবে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু পুরো ভারতে তারা সংখ্যালঘু। ভারতের মোট ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে তাদের শতকরা হার মাত্র দুই ভাগ। শিখদের দাবি, ‘খালিস্তান’ নামে নিজেদের একটি দেশ থাকবে, যার সূচনা হবে পাঞ্জাব থেকে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।