ধর্ম ডেস্ক : খতম তারাবিহ বা সালাতুত তারাবিহ বা কিয়ামুল লাইল বা তারাবিহ’র নামাজ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ রমজান মাসব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর দীর্ঘ তেলাওয়াত সহকারে পড়ে থাকেন।
খতম তারাবিহতে পুরো কোরআন পড়ার প্রচলন রয়েছে। এতে করে কিয়ামুল লাইল বা দীর্ঘ সময় নিয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ হয়। এবং নামাজে কোরআনের খতম শোনার সৌভাগ্য অর্জন হয়। যারা কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন না, তাদের জন্য কোরআন নাজিলের বরকতময় এ মাসে পুরো কোরআন শোনার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয় খতম তারাবি।
আরবি ‘تَرَاوِيْحِ তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি ৪ রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি ৪ রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে সালাতুত তারাবিহ বা তারাবিহ নামাজ বলা হয়। ফকিহরা তারাবির নামাজকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলেছেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হয়’। (বুখারি, হাদিস, ২০৪৭)
হাদিসে আরো বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখেন, তারাবিহ নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তার জীবনের আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাত, হাদিস, ১৮৬২)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে এবং তারাবিহ আদায় করবে, সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী ও শহিদদের কাতারভুক্ত বলে গণ্য হবে’। (সহি ইবনে হিব্বান)
তারাবিহ নামাজের ধারাবাহিকতায় দেশের বেশির ভাগ মসজিদে খতম তারাবিহ’র ব্যবস্থা করা হয়। কোরআন খতমের সহজতার জন্য এবং রমজানের শেষে ঈদ এবং অন্যান্য কাজের ব্যস্ততার আগেই স্বস্তির সঙ্গে খতম তারাবিহ যেন শেষ হয় এজন্য বিশেষ নিয়মে মসজিদগুলোতে খতম তারাবি পড়া হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকেও এই নিয়ম বলে দেওয়া হয় প্রতি বছর রমজানের আগে।
নিয়মানুযায়ী তারাবিতে প্রথম ৬ দিন দেড় পারা করে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। ৬ দিনে পড়া হবে ৯ পারা। আর বাকি ২১ দিনে ১ পারা করে তেলাওয়াত করা হয়। খতম তারাবিতে প্রথম ৬ দিনেই পড়া হয় কোরআনের ৭টি সূরা। বাকি সূরাগুলো পড়া হয় পর্যায়ক্রমে।
খতম তারাবিহ: কোন দিন কোন সূরা তেলাওয়াত করা হবে
প্রথম দিন : সূরা ফাতিহা প্রথম আয়াত থেকে সূরা বাকারা ২০৩ আয়াত।
দ্বিতীয় দিন : সূরা বাকারা ২০৩ আয়াত থেকে আলে ইমরান ৯১ নম্বর আয়াত।
তৃতীয় দিন : সূরা আলে ইমরান ৯২ থেকে সূরা নিসা ৮৭ আয়াত।
চতুর্থ দিন : সূরা নিসা ৮৮ থেকে সূরা মায়িদাহ ৮২ আয়াত।
পঞ্চম দিন : সূরা মায়িদাহ ৮৮ থেকে সূরা আরাফ ১১ আয়াত।
ষষ্ঠ দিন : সূরা আরাফ ১২ থেকে সূরা আনফাল ৪০ আয়াত।
সপ্তম দিন : সূরা আনফাল ৪১ আয়াত থেকে সূরা তওবা ৯৩ আয়াত।
অষ্টম দিন: সূরা তওবা ৯৪ আয়াত থেকে সূরা হুদ ৫ আয়াত।
নবম দিন : সূরা হুদ ৬ আয়াত থেকে সূরা ইউসুফ ৫২ আয়াত।
দশম দিন: সূরা ইউসুফ ৫৩ আয়াত থেকে সূরা হিজর ১ আয়াত
১১তম দিন : সূরা হিজর ২ আয়াত থেকে সূরা নহল ১২৮ আয়াত।
১২তম দিন : সূরা বনি ইসরাইল ১ আয়াত থেকে সূরা কাহাফ ৭৪ আয়াত।
১৩তম দিন : সূরা কাহাফ ৭৫ আয়াত থেকে সূরা তোহা ১৩৫ আয়াত।
১৪তম দিন : সূরা আম্বিয়া ১ আয়াত থেকে সূরা হজ ৭৮ আয়াত।
১৫তম দিন : সূরা মুমিন ১ আয়াত থেকে সূরা ফোরকান ৭৮ আয়াত।
১৬তম দিন : সূরা ফোরকান ২১ আয়াত থেকে সূরা নমল ৫৯ আয়াত।
১৭তম দিন : সূরা নমল ৬০ আয়াত থেকে সূরা আনকাবুত ৪৪ আয়াত।
১৮তম দিন : সূরা আনকাবুত ৪৫ আয়াত থেকে সূরা আহজাব ৩০ আয়াত।
১৯তম দিন : সূরা আহজাব ৩১ আয়াত থেকে সূরা ইয়াসিন ২১ আয়াত।
২০তম দিন : সূরা ইয়াসিন ২২ আয়াত থেকে সূরা জুমা ৩১ আয়াত।
২১তম দিন : সূরা জুমা ৩২ আয়াত থেকে সূরা হা–মিম সিজদা ৪৬ আয়াত।
২২তম দিন : সূরা হামিম সিজদা ৪৭ আয়াত থেকে সূরা জাসিয়া ৩৭ আয়াত।
২৩তম দিন : সূরা কাফ ১ আয়াত থেকে সূরা জারিয়াত ৩০ আয়াত।
২৪তম দিন : সূরা জারিয়াত ৩১ আয়াত থেকে সূরা হাদিদ ২৯ আয়াত।
২৫তম দিন : সূরা মুজাদালা ১ আয়াত থেকে সূরা তাহরিম ১২ আয়াত।
২৬তম দিন : সূরা মুলক ১ আয়াত থেকে সূরা মুরসালাত ৫০ আয়াত।
২৭তম দিন : সূরা নাবা ১ আয়াত থেকে সূরা নাস ৬ আয়াত।
উল্লেখ্য, রমজানের পুরোটা সময় বরকতপূর্ণ ও ইবাদতের জন্য নির্ধারিত। এ মাসে যেকোনো ইবাদত করা হলে তার সওয়াব বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে একটি নফল আমল করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি নফল আদায় করল’। (মিশকাত, হাদিস, ১৮৬৮)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।