জুমবাংলা ডেস্ক : শীতকালীন আগাম সবজির আবাদের প্রস্তুতি দেখে মনে হবে যেন বড় কোনো লোকসান পুষিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে মাঠে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। অতিবৃষ্টিতে জেলার অধিকাংশ সবজির জমিতে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
এদিকে হাতছানি দিচ্ছে ভোরের কুয়াশা আর তাতেই কৃষকরা সবজি আবাদে উদ্বুদ্ধ হতে শুরু করেছে। জেলার প্রায় সব কয়েকটি উপজেলাগুলোতে কম বেশি আবাদ হয়ে থাকে সবজির। তবে তিনটি উপজেলা উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বেশ বড় কয়েকটি সবজির আড়তের চাহিদাও মেটায়। এই সব কারণে এ অঞ্চলের সবজির চাহিদা রয়েছে সর্বত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলায় ভেতরে সবজিতে খ্যাতি অর্জনকারী উপজেলা সাটুরিয়া। এ উপজেলার চরতিল্লী এলাকায় বিস্তীর্ণ জমিতে চাষিরা শীতকালীন আগাম সবজির আবাদে ঝুঁকছে। তারা খেতের আগাছা পরিষ্কারসহ অন্যান্য পরিচর্যায় দিবানিশি পার করছেন। মূলা খেতে সবজি চাষিসহ নারী-পুরুষ একই সঙ্গে কাজ করছে। এই কাজের জন্য চাষিকে প্রতি জনের পারিশ্রমিক গুনতে হয় পাঁচ শতাধিক টাকা। প্রায় প্রতিটি চাষি তাদের অধিক জমিতে আবাদ করেছে শীতকালীন সবজি। কারো নিজের জমি আবার কারো কারো বর্গা বা বৎসর অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটি টাকার অংকে ভাড়া নিয়ে সবজি চায় করেছেন।
জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে প্রতি বিঘায় সবজির খেত অনুযায়ী ক্ষেত্র বিশেষ খরচ হচ্ছে। যেহেতু এবারে অতিবৃষ্টিতে সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাষিরা মরিয়া। চাষিদের ধারণা, বাজার ধরতে পারলে প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে লাভ হবে তাদের।
সবজি খেতে কাজ করতে আসা নারী শ্রমিক লালজান বেগম বলেন, প্রতি বছর এই সময়টাতে আমি সবজির খেতে কাজ করি, এবছরো জমিতে কাজ করছি। এবার টানা বৃষ্টিতে সবজির জমিতে পানি ঢুকে অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাষীরা আগাম আবাদ শুরু করেছে। আমরা যারা সবজির জমিতে আগাছা পরিষ্কারের কাজ করি তাদেরকে পাঁচশত টাকা করে দেয়। সংসারের কাজের ফাঁকে যে সময়টুকু অলস থাকে ওই সময়টাতে এই সবজির খেতে কাজ করি।
আব্দুল খালেক নামের আরও এক শ্রমিক বলেন, আমার জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় পার করেছি অন্যের জমিতে কাজ করতে করতে। এবার জমিতে বৃষ্টির পানি ঢুকে সব সবজির চারা পচে গেছে, এতে করে প্রচুর ক্ষতি হয় কৃষকের। এই ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে আগাম শীতকাল সবজির আবাদ শুরু করেছে চাষিরা। চাষিরা বাজার ধরতে পারলে কিছু ক্ষতি পোষাতে পারবে।
চরতিল্লী এলাকার মূলা চাষি গোলাম রাব্বানী বলেন, এ বছর ১০০ শতাংশ জমিতে মূলার আবাদ করেছি। দেখা যাচ্ছে ফলনও বেশ ভালো। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বিক্রির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। বাজার ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।
গোলাম রাব্বানী স্ত্রী ফাহিমা বেগম বলেন, এবারের টানা বৃষ্টিতে আমাগো সবজি খেতের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। যে টাকা খরচ করছিলাম তার কোনো একটা টাকা উঠাতে পারি নাই। সে জন্য শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করেছি। সবজি খেতে কাজের শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেশি হওয়া আমিও পাশাপাশি কাজে সহায়তা করছি।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আল-মামুন বলেন, মূলত এই সময়টাতে শীতকাল সবজি বাজারে উঠে কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। আশা করছি আগামী ১০/২৫ দিনের ভেতর জমি থেকে সবজি বাজারে আসতে শুরু করবে। এই অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। বৃষ্টিতে সবজির বীজতলার যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, ভালো দাম পেলে কৃষকের সেই ক্ষতি পূরণ হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।