আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রুশ মুদ্রায় রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা নিয়ে ইউরোপের ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যতম সদস্য হাঙ্গেরি ঘোষণা দিয়েছে, তারা রুবলের বিনিময়ে রাশিয়া থেকে গ্যাস কিনতে রাজি। এ বিষয়ে ইইউর নির্দেশনা মানা বাধ্যতামূলক নয় বলেও জানিয়েছে দেশটি। খবর রয়টার্স’র।
হাঙ্গেরিয়ান প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বুধবার (৬ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাশিয়া চাইলে তারা গ্যাসের দাম রুবলে পরিশোধ করতে রাজি।
এর আগে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজ্জার্তো বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তিতে ইইউর ‘কোনো ভূমিকা’ নেই। হাঙ্গেরির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এমভিএম ও রাশিয়ার গ্যাজপ্রমের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে এই কার্যক্রম চলছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে গ্যাস কিনতে হলে ইউরোপকে অবশ্যই রুবলে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। তবে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) পুতিনের এই হুঁশিয়ারি মানতে রাজি নয়। তারা বলেছে, রাশিয়ার গ্যাস কিনতে যাদের ইউরো অথবা ডলারে মূল্য পরিশোধের চুক্তি রয়েছে, তাদের সেটিই মেনে চলা উচিত।
হাঙ্গেরি রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে রাজি হওয়ার বিষয়ে ইসির এক মুখপাত্র বলেছেন, ইউরোপীয় কমিশন কোনো জাতীয় কর্তৃপক্ষের ঘোষণার বিষয়ে মন্তব্য করে না।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে মস্কোর ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করা অল্প কিছু ইউরোপীয় দেশের মধ্যে হাঙ্গেরি অন্যতম। ন্যাটো সদস্য দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার বহু বছরের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। গ্যাসের জন্য হাঙ্গেরি বরাবরই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল।
রাশিয়ার ওপর ইউরোপের গ্যাসনির্ভরতা
ইউরোপীয় দেশগুলোর চাহিদার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গ্যাসই সরবরাহ করে রাশিয়া। ফলে পুতিনের ঘোষণায় ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষগুলো বেশ বিপাকে পড়েছে। কোন পথে যাবে তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে তারা।
গত সোমবার স্লোভাকিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
পোল্যান্ডের প্রভাবশালী গ্যাস কোম্পানি পিজিএনআইজি বলেছে, গ্যাজপ্রমের সঙ্গে তার চুক্তির শর্তগুলো উভয়পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক। এর মেয়াদ চলতি বছরের শেষের দিকে শেষ হবে।
অস্ট্রিয়ার ওএমভি ও রাশিয়ার গ্যাজপ্রমের মধ্যে রুবলে মূল্য পরিশোধের বিষয়ে প্রাথমিক যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র। তবে গত শুক্রবার ভিয়েনা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউরো বা ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রায় মূল্য পরিশোধের কোনো ভিত্তি নেই।
রুশ গ্যাসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হাঙ্গেরি গত বছর দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস সরবরাহের চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুসারে, দেশটিতে প্রতি বছর ৪৫০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস রপ্তানি করবে গ্যাজপ্রম।
সার্বিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার আলেকসান্ডার ভুসিকের সঙ্গে সম্প্রতি জ্বালানিসহ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। রাশিয়া থেকে সার্বিয়ার গ্যাস আমদানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ মে। এ কারণে যত দ্রুতসম্ভব নতুন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা দরকার বলে জানিয়েছে ভুসিকের অফিস।
ইউরোপ ও ন্যাটোর আরেক সদস্য লাটভিয়ার বৃহত্তম গ্যাস কোম্পানির এক-তৃতীয়াংশের মালিকানা গ্যাজপ্রমের হাতে। রুশ গ্যাস আমদানিতে ইউরো নাকি রুবলে মূল্য পরিশোধ করা হবে তা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে লাটভিয়ান প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, রুবেল মূল্য পরিশোধ ব্যবস্থাকে সমর্থন করে না লাটভিয়া। তার মতে, এ বিষয়ে ইউরোপে একটি সাধারণ পদ্ধতি থাকতে হবে।
এছাড়া লিথুনিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা রাশিয়া থেকে আর গ্যাস আমদানি করবে না। এর ফলে ইউরোপের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে রুশ জ্বালানি আমদানি বন্ধ করলো তারা।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে রুশ জ্বালানির ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার আবদেন জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত অত কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি ইইউ। যদিও রাশিয়া থেকে কয়লাসহ অন্যান্য পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে তারা।
রাশিয়া যে তিনটি প্রধান পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে, বুধবার তার সব ক’টিতেই সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।