ভদ্রতার আড়ালে যে প্রতারণার বিরাট ফাঁদ লুকানো রয়েছে তা বোঝেননি কেউ। যখন বোঝা গেল তখন কোটি কোটি আত্মসাৎ হয়ে গিয়েছে! কিটি পার্টির আয়োজন করতেন এবং পয়সাওয়ালা ঘরের মহিলাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন সবিতা। ঘরোয়া পার্টিতেই দাবি করতেন, তাঁর সঙ্গে একাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের যোগাযোগ রয়েছে। এসবের মাঝেই কিটি পার্টিতে সবিতা তাঁর বন্ধুদের প্রতারণামূলক বিনিয়োগ পরিকল্পনায় প্রলুব্ধ করতেন। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ভারতে।
সবিতা বলতেন, মোটা টাকা বিনিয়োগ করলেই চারগুণ রিটার্ন মিলবে, সেই টাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবহার হবে, সুযোগ মিলবে কম দামে সোনা কেনারও। অভিযোগ, এভাবেই ২০ জনেরও বেশি বন্ধুর থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সবিতা। এরকমই এক প্রতারিতের নির্দিষ্ট অভিযোগের অভিযোগে সবিতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ৪৯ বছর বয়সী সবিতা বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেই একই ধরণের প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সবিতা। পরে হয়ে জামিনে মুক্ত হন।
কিটি পার্টি জালিয়াতির শিকার কুসুমার অভিযোগের পর সাবিতা এবং তাঁর ছয় সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এফআইআর অনুসারে, একজন গৃহিণী এবং বিধবা কুসুমা বেঙ্গালুরু শহরে তাঁর বাবা-মা এবং ছেলের সঙ্গে থাকেন। গত ৩০ বছর ধরে তিনি সাবিতাকে চেনেন। ২০২০ সাল থেকে কুসুমা, সবিতার পরামর্শে বিনিয়োগ প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।
২০২৩ সালের ঘটনা। সাবিতা কুসুমাকে ফোন করে দুবাইতে সোনার দাম কম থাকার কথা জানিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সেখানেই তাঁর স্বামী কর্মরত ছিলেন। দুই বছরের জন্য সোনায় বিনিয়োগ করলেই মিলবে চারগুণ বেশি টাকা, সাবিতা একটি লোভনীয় প্রস্তাবে রাজি হয়ে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন কুসুমা। ২৪ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। এই অর্থ ছিল তাঁর প্রয়াত স্বামী এবং তাঁর পুরো জীবনের সঞ্চয়।
প্রাক্তন শিক্ষিকা কুসুমা তাঁর ২৪ লক্ষ টাকার মধ্যে ২.২৫ লক্ষ টাকা অভিযুক্ত সবিতার ভাইকে দেন। বাকি ১৯.৮৫ লক্ষ টাকা নগদ অভিযুক্ত সবিতার মাকে দেওয়া হয়েছিল। অবশিষ্ট ১.৯ লক্ষ টাকা ফোন পে-এর মাধ্যমে সাবিতা-র মেয়ে বাল্মিকাকে পাঠানো হয়েছিল।
এফআইআর অনুসারে, প্রতিটি স্থানান্তরের পরে, কুসুমা সাবিতাকে ফোন করে টাকা স্থানান্তর সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন।
এফআইআরে বলা হয়েছে, “২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি, সাবিতা আমাকে ফোন করে বলেন যে তিনি উদয় টিভি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন এবং আমার বিনিয়োগের দ্বিগুণ টাকা দিয়েছেন। এরপর তিনি আবারও আমাকে আরও ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে বলেন। আবারও নিশ্চিত রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেন। আমি বিশ্বাস করে ১০ লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছি।”
পরবর্তী কয়েক মাস ধরে, কুসুমা সাবিতাকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেন, কখনও বিনিয়োগের জন্য, কখনও কখনও অভিযুক্তের মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করার জন্য অথবা গাড়ির ঋণ পরিশোধ করার জন্য।
কয়েক মাস পর, ২০২৫ সালের জুনে, যখন কুসুমা সাবিতাকে তাঁর কাছ থেকে ৯৫ লক্ষ টাকা চাইতে তার বাড়িতে যান, তখন তাঁকে সবিতা ফিরে যেতে বলেন।
সাবিতা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি অনেক লোকের কাছ থেকে টাকা ধার করেছেন এবং তাদের কাউকেই সেগুলো আর ফেরৎ দেবেন না।
এরপরই কুসুমা গত ৮ জুলাই সবিতার বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। সবিতা, পুণিত, সতীশ, বাল্মিকা, দর্শন, লোকেশ এবং শ্রীধর-সহ সাতজনের নাম উল্লেখ ছিল এফআইআর-এ।
বহু কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে ২০ জনেরও বেশি মহিলার সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে বাসবেশ্বরনগর পুলিশ সবিতাকে গ্রেপ্তার করে। ধনী ও ধনী মহিলাদের শনাক্ত করে তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য তিনি প্রাতঃভ্রমণ বেছে নিয়েছিলেন। পরে তাঁদের কিটি পার্টি এবং অন্যান্য জমায়েতে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারত ও বিদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিতেন।
অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং কর্ণাটকের মন্ত্রী এমবি পাতিলের মতো নাম বলতেন এবং ধীরে ধীরে বিনিয়োগের নামে তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন।
গোবিন্দরাজনগর থানায় দায়ের করা একই ধরণের মামলায় সাবিতাকে এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি তাঁর প্রতারণামূলক কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছেন। ফের তাঁকে জেলবন্দি করা হয়েছে।
এই মামলাটির সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে ঐশ্বর্য গৌড়ার প্রতারণার মামলার মিল রয়েছে। সেই মামলা বর্তমানে পুলিশ এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তাধীন। ঐশ্বর্য গৌড়ার বিরুদ্ধে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দাবি করে বেশ কয়েকজনকে প্রতারণা করার অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারের ভাই ডি কে সুরেশ-সহ অন্যান্যরাও রয়েছেন।
এই ধরনের প্রতারণার মামলার তদন্তকারী পুলিশরা প্রায়শই একটি বড় বাধার সম্মুখীন হয়, কারণ অভিযুক্তরা প্রায়শই তদন্ত বা কার্যক্রমের উপর আদালতের নির্দেশিত স্থগিতাদেশ সহজেই পেতে পারে। এই স্থগিতাদেশ ওঠানোর বিষয়টি পুলিশ এবং অভিযোগকারী উভয়ের জন্যই প্রায়শই সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।
নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতরা শনাক্ত, মিলল ২ জনের পরিচয়
ঐশ্বর্য গৌড়া মামলায়, আদালতের স্থগিতাদেশ বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। একইভাবে সাবিতার ক্ষেত্রে, গোবিন্দরাজনগর থানায় দায়ের করা একটি পূর্ববর্তী এফআইআরও স্থগিত করা হয়েছে, যা ন্যায়বিচারকে আরও বিলম্বিত করে এবং চলমান তদন্তকে জটিল করে তোলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।