জুমবাংলা ডেস্ক : বান্দরবানের রুমা শাখা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণের ৪৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার করে র্যাব। পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কাছে বন্দী থাকা সেই মুহূর্তের কথা র্যাবের কাছে বর্ণনা দিয়েছেন ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বান্দরবান জেলা পরিষদ হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মইন জানান, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দিনগত রাতে বান্দরবানের রুমা শাখা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণের পর পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছে তার চোখ বেঁধে ফেলা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব। এ সময় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা তাকে পাহাড়ের ঝিরিপথে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ১০ থেকে ১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছিল বলে র্যাবকে জানিয়েছেন তিনি।
যেতে যেতে এক সময় তারা ম্যানেজারের চোখ খুলে দেয়। অন্ধকারে চলার সুবিধার্থে ম্যানেজারকে একটি বাটন ফোনও দেওয়া হয়। মাঝে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামের সুযোগ দেয় তারা। এরপর আবার হাঁটা শুরু। একপর্যায়ে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে নেজাম উদ্দীনকে নীরব স্থানে নিয়ে গিয়ে ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য তাকে পাহারা দিতে থাকে সন্ত্রাসীরা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ব্যাংক ম্যানেজারকে তারা নাস্তা খাইয়ে আবারও হাঁটিয়ে পাহাড়ি ঝিরিপথ দিয়ে অন্য একটি পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল বলে জানান ম্যানেজার নেজাম। তারা তারা কলার পাতায় তাকে ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয় এবং পরে সেখান থেকে হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে নেজামকে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো বিশ্রামের সুযোগ দেয়। পরে কয়েক ধাপে তাকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে অন্য একটি জায়গায় নেয়া হয় এবং রাতের খাবার খেতে দেয়া হয়।
র্যাব আরও জানায়, সন্ত্রাসীরা সবসময় নিজেদের মধ্যে বম ভাষায় কথা বললেও ম্যানেজারের সঙ্গে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথাবার্তা বলেছে। সবসময় তাকে ২ থেকে ৩ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘিরে রাখত এবং ১২ থেকে ১৩ জন আশপাশে অবস্থান করত।
বুধবার রাত ৮টার দিকে সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে একটি টং ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে রাতে ঘুমানোর জায়গা দেয়। সেখানে তার সঙ্গে পাহারারত ৫ সন্ত্রাসী ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত তারা ম্যানেজারকে নিয়ে সেখানেই অবস্থান করে। পরে প্রায় এক ঘণ্টা হেঁটে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঘণ্টাখানেক বিশ্রামের পর ব্যাংক ম্যানেজারকে মোটরসাইকেলে নতুন একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে র্যাব জানায়।
অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ম্যানেজার নেজামকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দেয়। তিনি যেন প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা না নেন, সে বিষয়ে পরিবারকে সতর্ক করা হয় বলে র্যাবকে জানান ম্যানেজার।
এদিকে, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ায় ওই সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ম্যানেজারের অবস্থান শনাক্ত করে র্যাব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বান্দরবানের রুমা বাজার ও বেথেলপাড়ার মাঝামাঝি স্থান থেকে নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে র্যাবের মধ্যস্থতায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে বান্দরবান সদরে র্যাব কার্যালয়ে নেওয়া হয় এবং রাতে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে নেজাম উদ্দীনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব।
র্যাব জানায়, মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র কুকি-চীন সদস্য (কেএনএফ) রুমা বাজারে সোনালী ব্যাংকে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্যান্যদের জিম্মি করে ২টি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮টি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি এবং আনসার সদস্যদের ৪টি শটগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ ছিনিয়ে নেয়। এরপর সন্ত্রাসীরা সোনালী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ব্যাংক ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।