লাইফস্টাইল ডেস্ক : সাদা চাল ও লাল চালের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে অনেক। কোনটা খাওয়া ভালো, কোনটা খাওয়া খারাপ এবং এর পেছনের কারণগুলো কী সেই সম্পর্কে চিকিৎসক তানজিম জারা জানিয়েছেন একটি ভিডিওতে।
ধান, গম বা যেকোনো শস্যদানার তিনটি অংশ থাকে। শস্যদানার বাইরের অংশকে বলা হয় ব্রান বা কুঁড়া। এই অংশে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান যেমন আয়রন, কপার, জিংক ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ও প্রচুর পরিমাণের ফাইবার থাকে। এগুলো আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। মেশিনে সাদা চাল বানানোর সময় এই পুষ্টিকর আস্তরণ ফেলে দেওয়া হয়। ফাইবার চলে যাওয়ার কারণে এই চালের ভাত চাবানো আমাদের জন্য সহজ হয়। অর্থাৎ ভাত খেতে নরম লাগে। কিন্তু সাথে সাথে চালের পুষ্টিগুণ অনেকাংশেই কমে যায়।
শস্যদানার ভেতরের অংশকে বলা হয় জার্ম। এখান থেকেই নতুন উদ্ভিত জন্মায়। পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে এই অংশটি। ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফ্যাট ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে এর ভেতরে। চালের মধ্যে এই অংশটি থাকলে চাল বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এটা ফেলে দিলে অনেকদিন গুদামে বা দোকানে চাল রেখে দেওয়া যায়। তাই সাদা চাল তৈরির সময় পুষ্টিকর এই অংশটিও সরিয়ে ফেলা হয়।
সাদা চালে থাকে শুধু মাঝের অংশটি, যেটি কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর। এর পাশাপাশি সামান্য পরিমাণে কিছু ভিটামিন, প্রোটিন ও মিনারেল পাওয়া যায় এই অংশে। প্রথাত সবচেয়ে কম পুষ্টিগুণ যে অংশে, সাদা চালে কেবল সেটাই থাকে।
শস্যদানার তিনটি অংশই যখন অটুট থাকে, তখন সেটাকে বলে হোলগ্রেইন বা পুরো শস্যদানা। লাল চাল হচ্ছে পুরো শস্যদানা। এটা সেদ্ধ হতে সময় লাগে, খেতেও খুব একটা নরম লাগে না। কিন্তু পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে লাল চাল।
সাদা চাল কেন ক্ষতিকর আমাদের জন্য?
কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পর আমাদের শরীর সেটা ভেঙে চিনি তৈরি করে, শেখান থেকে চিনি রক্তে প্রবেশ করে। রক্তে যখন চিনির পরিমাণ বাড়তে থাকে, তখন আমাদের শরীর একটা হরমোন তৈরি করে। এই হরমোন হচ্ছে ইনসুলিন। ইনসুলিন রক্তে চিনির পরিমাণ কমায়। চিনিগুলোকে রক্ত থেকে সরিয়ে আমাদের কোষের ভেতরে ঢুকায় ইনসুলিন। শেখান থেকে আমরা শক্তি পাই অথবা শক্তি জমা থাকে শরীরে। কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরে কতো দ্রুত আমাদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায় সেটার পরিমাপক হচ্ছে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। সাধারণ নিয়ম হলো কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবারগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। অর্থাৎ যে খাবারগুলো খেলে রক্তে আস্তে আস্তে চিনির পরিমাণ বাড়ে, হুট করে অনেক পরিমাণে বেড়ে যায় না- সেই খাবারগুলো আমাদের জন্য ভালো। তবে সাদা চালের ভাত খেলে খুব দ্রুত আমাদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। আমাদের শরীর দ্রুত এই খাবারকে ভেঙে চিনি তৈরি করে এবং হুট করে অনেক পরিমাণে চিনি চলে আসে রক্তে। রক্তে অতিরিক্ত চিনি কমানোর জন্য অনেক বেশি পরিমাণে ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে লাল চালের ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এটা ভাঙতে শরীরের অনেক বেশি সময় লাগে ও রক্তে চিনির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ে। ফলে ইনসুলিন কম প্রয়োজন হয় ও অনেকক্ষণ পেট ভরা লাগে।
আড়াই লক্ষ মানুষের উপর করা ৭টি গবেষণা বলছে; যারা প্রতিদিন পুরো শস্যদানা খায় তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ২১ শতাংশ পর্যন্ত কম ছিল। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, চাইনিজ ও জাপানিজ মানুষের মধ্যে যারা সাদা ভাত বেশি খায়, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৫৫ শতাংশ বেশি। চার লক্ষ মানুষের উপর করা ১০টি গবেষণা একত্র করে দেখা গেছে, যারা দিনে দেড় কাপ লাল চালের ভাত খায়, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমেছে ৩২ শতাংশ।
কেবল ডায়াবেটিস, স্ট্রোক বা হৃদরোগের মতো অসুখই না, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো পীড়াদায়ক অসুখ থেকেও দূরে রাখে লাল চাল। লাল চালে থাকা ফাইবার আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে।
জেনে নিন
লাল চালের স্বাদে হুট করেই অভ্যস্ত হতে হবে এমন নয়। ধীরে ধীরে খাওয়া শুরু করতে পারেন। সাদা ভাতের সঙ্গে লাল ভাত মিশিয়ে খাওয়া শুরু করেন। স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বাদ দিতে পারেন সাদা ভাত।
লাল চালের ভাত হলেই যে অনেক বেশি খাওয়া যাবে এমন নয়। সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। অর্থাৎ শাকসবজির পাশাপাশি ভাত ও ফলও রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।
নাস্তায় পুরো শস্যদানা রাখতে চাইলে রোলড ওটস খেতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।